নুরুল হক নুরের বিদেশে চিকিৎসার দাবি গণঅধিকার পরিষদের

 গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি এ দাবি তুলে ধরেন। পোস্টে নুরুল হক নুরের স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে রাশেদ খান বলেন, “নুরুল হক নুরের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা গেলে স্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তার দুই চোখে আঘাত লেগেছে এবং নাকের হাড় ভেঙে গেছে। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল স্থান। উন্নত চিকিৎসা ছাড়া বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে।”

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা থাকলেও নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। কিন্তু নানা কারণে বাংলাদেশে নুরুল হক নুরের চিকিৎসায় নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। তাকে সুস্থ দেখানোর জন্য আমরা অপ্রাণ চেষ্টা করব। কিন্তু যেভাবে তার মুখে ও মাথায় আঘাত করা হয়েছে, তা দেশবাসী দেখেছে। এই হামলার পিছনে বড় ধরনের পরিকল্পনা না থাকলে মাথায় ও মুখে আঘাত করার কথা নয়।”

তিনি আরও জানান, “অনতিবিলম্বে নুরুল হক নুরের নিরাপত্তা বিবেচনায় বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।” নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। গণঅধিকার পরিষদের এই দাবি এখন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, এবং এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা নিয়ে সবার আগ্রহ রয়েছে।

নুরুল হক নুরের ওপর হামলা: ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্রের অশনি সংকেত, বললেন এনসিপি নেতা সারজিস আলম

 জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য একটি অশনি সংকেত। তিনি বলেন, “জনগণ যে ত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শাসন উৎখাত করেছে, তার বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নেব না।”

রোববার (৩১ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে চীন সফর শেষে দেশে ফিরে সারজিস আলম সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান। সেখানে নুরুল হক নুরকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস আলম বলেন, “দেশের মানুষ এখন নতুন সংবিধান, সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে। এই পরিস্থিতিতে ফ্যাসিস্ট দোসরদের সহযোগিতা করা মানে জনগণের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা।” তিনি নুরুল হক নুরের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান।

এ সময় ঢামেক হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম সদস্য সচিব মশিউর রহমান, জয়নাল আবেদীন শিশির, সংগঠক নাহিদ উদ্দিন তারেকসহ দলটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এনসিপির নেতারা এই ঘটনাকে ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনরুত্থানের চেষ্টা হিসেবে দেখছেন এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিএনপি জয়ী হলে তারেক রহমানই প্রধানমন্ত্রী: মির্জা ফখরুল

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের রায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠন করলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে তারেক রহমানই হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। আশা করি, তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন।”

নির্বাচনে জোট গঠনের বিষয়ে দলের ভাবনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিএনপির সমমনা হিসেবে অনেক ইসলামি দল আছে, তাদের জোটে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।” তবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে জোট করার কোনো সম্ভাবনা নেই।”

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপির অবস্থান আমরা পরিষ্কার করেছি। প্রতিটি সংস্কারের বিষয়ে আমরা বলেছি, কীভাবে সেগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে। সংবিধান বাদ দিয়ে নয়, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এগুলো করা যায়। যেগুলো এখনই অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব, সেগুলো করা হবে। আর যেগুলো সম্ভব নয়, সেগুলো নির্বাচিত পার্লামেন্টের মাধ্যমে করা হবে।”

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সময় দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।” তবে আওয়ামী লীগের মূলধারার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না। তিনি বলেন, “আমি আপাতত ৫০ বছরেও তাদের ক্ষমতায় ফেরার কোনো সম্ভাবনা দেখি না। রাজনীতিতে ফেরার বিষয়টি জনগণের ওপর নির্ভর করবে।”

বিএনপির এই ঘোষণা ও অবস্থান আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন গতি সঞ্চার করেছে। দলটির সমর্থকরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আশাবাদী হলেও, নির্বাচনী জোট ও সংস্কারের বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি রয়েছে।

নুরুল হক নুরের উপর হামলা: স্ত্রী মারিয়া নুরের ক্ষোভ ও দোয়ার আবেদন

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের উপর নৃশংস হামলার ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী মারিয়া নুর। রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে নুরুল হক নুরকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ ঘটনাকে ‘কল্পনাতীত’ ও ‘ন্যক্কারজনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

মারিয়া নুর বলেন, “গত ৮ বছরেও আমার স্বামীর ওপর এত নৃশংস ও ন্যক্কারজনক হামলা হয়নি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে ডাকসু নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময়ে নুরের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ‘ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশে’ প্রশাসনের এ ধরনের হামলা কল্পনার বাইরে।”

তিনি জানান, ৩০ আগস্টের ঘটনাটি তিনি সরাসরি সম্প্রচারে দেখেছেন এবং এই নৃশংসতার কারণে তিনি স্তব্ধ হয়ে গেছেন। “আমি কখনো কল্পনা করতে পারিনি। এটা বর্ণনা করার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না,” বলেন তিনি। মারিয়া নুর আরও বলেন, “আমার লাইফটা সম্পূর্ণ আলাদা। তারপরও মিডিয়ার সামনে আসতে বাধ্য হলাম।”

মারিয়া নুর জানান, নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। তিনি বলেন, “তার ব্রেন, নাক, চোয়াল ও মেরুদণ্ডসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত লেগেছে। ডাক্তাররা বলছেন, ৩৬ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর তার অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা যাবে। এখনো ৭২ ঘণ্টা না গেলে তিনি আশঙ্কামুক্ত নন।”

তিনি আরও বলেন, “এই শঙ্কার মধ্যে মিডিয়ার সামনে আসা সহজ নয়। কিন্তু তার অবস্থা জানার জন্যই আমি হাসপাতালে এসেছি। আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া চাইছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নেওয়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়।”

এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। নুরুল হক নুরের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন তার স্ত্রী মারিয়া নুর।

নির্বাচনের আগে আম্পায়ারের নিরপেক্ষতা লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ

 কুমিল্লার দেবিদ্বারের মোহাম্মদপুর গ্রামে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্যোগে ‘উঠানে রাজনীতি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে আম্পায়ার কোনো নির্দিষ্ট দলের পক্ষে খেলবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এটা লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এখানে কারও মুখের কথা আমরা বিশ্বাস করি না।”

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিজেদের কিছু শর্ত উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “গত ১৬ বছরে রাতে ভোট, দিনে ভোট, এমনকি কবর থেকেও ভোট দেওয়ার নজির দেখা গেছে। রেফারিরাও আওয়ামী লীগের পক্ষে গোল দিয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে নিয়ম পরিবর্তন অপরিহার্য। এজন্য আম্পায়ারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রের এত বড় একটি কাজ আমি লিখিত ছাড়া কীভাবে বিশ্বাস করি? এজন্য আলোচনা চলছে। এগুলো লিখিত নিয়মে বাধা থাকতে হবে। নিয়মটা বিএনপি-জামায়াত বা এনসিপির পক্ষে হওয়ার দরকার নেই, এটা বাংলাদেশের পক্ষে হোক। নতুন বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে যারা প্রতারণা করবে, তারা টিকতে পারবে না। আমরাও যদি প্রতারণা করি, আমরাও টিকতে পারব না।”

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও উল্লেখ করেন, “ভবিষ্যতে কোনো প্রার্থী যদি টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি দুর্নীতির টাকা খরচ করছেন। জনগণ এক হাজার টাকা নিলে কোটি টাকার উন্নয়নকাজ নষ্ট হয়। টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে এমপি হয়ে প্রার্থীরা পরে ঘুস, টেন্ডার ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে বহুগুণ টাকা তুলে নেন।”

তিনি বলেন, “জনগণ সৎ হলে নেতাও সৎ হবে, জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে নেতাও দুর্নীতিগ্রস্ত হবে। কারণ নেতা সব সময় জনগণের প্রতিফলন। একজন সচেতন মানুষ পুরো সমাজকে পরিবর্তন করতে পারে। এই প্রজন্ম দুর্নীতি করে না, ঘুস খায় না, অন্যায়কে অন্যায় বলে। তাই ভবিষ্যতে দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না।”

উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রধান সমন্বয়কারী জামাল মোহাম্মদ কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এসএম সাইফ মোস্তাফিজ, দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আলম মিতু প্রমুখ।

শাপলা চত্বরের রক্তের স্রোতেই চব্বিশের চেতনার ধারা শুরু: মাওলানা মামুনুল হক

 রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শনিবার (৩০ আগস্ট) শাপলা স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ‘শাপলা কেন্দ্রীক বিভিন্ন কাজে অংশীজনের সম্মাননা ও সম্মিলনী–২০২৫’ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর ও শাপলা স্মৃতি সংসদের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, শাপলা চত্বরের রক্তের স্রোতেই চব্বিশের চেতনার ধারা শুরু হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে শাপলার কথা উল্লেখ না হওয়ার দায় ড. ইউনূস ও পুরো অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “শাপলার চেতনাকে আগামীর বাংলাদেশের মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য শাপলা স্মৃতি সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শাপলার শহীদ পরিবারের অভিভাবকত্ব গ্রহণের জন্য গঠিত হয়েছে শাপলা শহীদ গার্ডিয়ান্স ফোরাম।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাইয়ের মূল্যায়ন মানেই শাপলাকেও মূল্যায়ন করা।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন শাপলা স্মৃতি সংসদের নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন, মাওলানা আল আবিদ শাকির এবং মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাগর। এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রচার সম্পাদক মাওলানা হাসান জুনাইদও পরিচালনায় অংশ নেন।

আলোচকরা বলেন, শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই ইতিহাস গোপন করার অপচেষ্টা বিগত এক যুগ ধরে চললেও শাপলার শহীদদের রক্ত তাদের ত্যাগকে চিরজীবন্ত রেখেছে। শাপলা স্মৃতি সংসদ আগামী প্রজন্মের কাছে এই সত্য তুলে ধরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, “শাপলার শহীদরা আমাদের ঈমানি শক্তির প্রতীক। তাদের আত্মত্যাগ ধারণ করেই ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যাবে।”

জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশের জয়েন্ট সেক্রেটারি আব্দুল হালিম বলেন, “বিগত ১৫ বছরে আলেম সমাজকে ভিন্নভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। এখন তা পাল্টে গেছে।”

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মূখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, “শাপলার ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ঘটনা। ৭২-এর পর থেকে দেশের চালক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু দেশের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সংবিধান পরিবর্তন না হলে আবারো শাপলা ফিরে আসবে।”

বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন বলেন, “ইসলামের তাহযিব ও তামাদ্দুন রক্ষায় আপনাদের বজ্রকণ্ঠ যতদিন থাকবে, ততদিন এদেশে ইনসাফ থাকবে। ভিপি নূরের রক্ত বৃথা গেলে আগামীতে দাড়ি-টুপি ওয়ালাদের জন্যও অপমান অপেক্ষা করছে।”

খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, “শাপলা শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় প্রজন্মকে ইতিহাস সচেতন করা এখন জরুরি দায়িত্ব।”

সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান

অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের শাপলা গণহত্যার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, হতাহতদের চিকিৎসা সেবা, আইনি সহায়তা ও মানবাধিকারে সোচ্চার ভূমিকার জন্য প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় আলজাজিরা, দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ও হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরকে (২০১৩ সালের কমিটি)। এছাড়া গণমাধ্যম, আইন, মানবাধিকার, চিকিৎসা সেবা, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও পুনর্বাসন সহায়তা খাতে অবদানের জন্য ২১ জন ব্যক্তিকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

সম্মাননা ও ক্রেস্ট তুলে দেন শাপলা চত্বরে শহীদ মতিউর রহমান, শহীদ মুক্তার মিয়া ও শহীদ ইউনুছ আলীর পিতারা।

শাপলা চত্বরের শহীদদের স্বীকৃতি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন নয়: মাওলানা মামুনুল হক

 বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, শাপলা চত্বরের শহীদদের স্বীকৃতি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধান বাংলার মাটিতে চলতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে ঢাকার ধুপাখোলা মাঠে বাংলাদেশ জাতীয় সিরাত কমিটি আয়োজিত সিরাতুন্নবী মহাসম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় মঞ্চে তার পাশে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

নির্বাচন প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, “নির্বাচনের কথা অনেক পরের বিষয়। প্রথমে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের শহীদদের রক্তের স্বীকৃতি দিতে হবে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের যোদ্ধারা যে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রক্ত দিয়েছিলেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই সনদ বাংলার মাটিতে কার্যকর করতে হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধান এদেশে চলবে না, চলতে দেওয়া হবে না।”

১৯৭২ ও ২৪ এর সংঘাত নিয়ে তিনি বলেন, “২৪ এর রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করে যারা ১৯৭২ এর বাকশালী ব্যবস্থায় ফিরতে চান, তাদের মুখে শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণের আগে ওজু করে নিতে হবে। আমরা জীবন দেব, রক্ত দেব, রক্তের সাগর বইবে, কিন্তু ২৪ এর বিপ্লব ব্যর্থ হতে দেব না ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশে স্বৈরাচারীদের ভাস্কর্য নামক মূর্তি আর স্থাপন করা হবে না।”

তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “জুলাই যোদ্ধাদের নামে বা শহীদদের জন্য রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় ভাস্কর্য নির্মাণের বিপজ্জনক চেষ্টা কেউ করবেন না। শহীদ আবু সাঈদ বা মুগ্ধদের নামে ভাস্কর্য বানালে, শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের মতোই আমরা তার সঙ্গে ব্যবহার করব। শহীদ জিয়াউর রহমানের নামেও রাষ্ট্রীয় ভাস্কর্য স্থাপন করা হলে তা জীবন দিয়ে প্রতিহত করব, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব। আদর্শের জায়গায় কোনো আপস নেই।”

১৯৭২ সালের সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভারতের চরণতলে বলি দেওয়া হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ ১৯৭২ এর ভারতীয় আধিপত্যবাদের চেতনাকে প্রতিহত করবে। এই চেতনা আর চলতে দেওয়া যাবে না।”

নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদের তীব্র প্রতিক্রিয়া, আওয়ামী লীগের ‘প্রেতাত্মা’ নিষিদ্ধের দাবি

 গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, “এখনো আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা দেশে রয়ে গেছে। তাদের চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালিয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের নিষিদ্ধের দাবিতে আমরা যমুনা ঘেরাও করব।” শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রাশেদ খান আরও জানান, নুরের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এই হামলার সময় বলা হয়েছে জুলাই ভরে দেওয়া হবে।”

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর রাত সোয়া ৮টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে নুরুল হক নুরসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় নুরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তার দলের নেতাকর্মীরা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য ছুটে যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। রাত ৯টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ সময় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং সড়কে আগুন জ্বালিয়ে দেন। পুলিশ ও সেনাসদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন।

গুরুতর আহত নুরুল হক নুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টার (ওসিসি) থেকে রাত ১২টার দিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউর ৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের ওসিসির একজন চিকিৎসক জানান, নুরের নাক ও চোখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা না গেলে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না।

নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় হাসনাত আব্দুল্লাহর তীব্র প্রতিক্রিয়া

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি এই হামলাকে ভারতের প্রত্যক্ষ মদতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শুক্রবার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘শুরুটা হয়েছিল রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা দিয়ে, যে পরিকল্পনা আমি ১১ মার্চ প্রকাশ করে দেই। সেই পুনর্বাসন ভেস্তে গেলেও ওরা থামেনি। সেই একই গ্রুপ এবার আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের জন্য বেছে নিয়েছে জাতীয় পার্টিকে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘ভারতের প্রত্যক্ষ মদতে জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ব্যাক করানোর এই খেলায় প্রথম রক্ত দিলেন আমাদের নুর ভাই। এখন যদি আমরা নুরুল হক নুরের ওপর এই ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ না করতে পারি, জাতীয় পার্টিকে দিয়ে ফ্যাসিবাদ ফেরানোর এই চেষ্টা প্রতিহত না করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশটাই আবার নুর ভাইয়ের মতো রক্তাক্ত হয়ে যাবে।’

এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘নুরুল হক নুরের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। ভারতের প্রেসক্রিপশনে বিপ্লবীদের রক্তাক্ত করে আওয়ামী লীগ ফেরানোর এই চেষ্টা আমরা সফল হতে দেব না।’ তিনি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দেশবাসীকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নিপীড়ন থেকে দেশ মুক্ত, তবে সতর্ক থাকতে হবে: আব্দুস সালাম পিন্টু

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু বলেছেন, “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যদি আরও পাঁচ মাস ক্ষমতায় থাকত, তবে আমি বেঁচে থাকতাম না। গত ১৭ বছরে তার নিপীড়নে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। আজ আওয়ামী লীগ নেই, তবে এখনো তাদের দোসররা নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করছে।”

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলামের অকাল মৃত্যুতে আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আব্দুস সালাম পিন্টু আরও বলেন, “আমাদের দলেও কিছু স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের লোক প্রবেশ করেছে। তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, সেই গণতন্ত্র রক্ষা করাই আমাদের মূল দায়িত্ব। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, যুব সমাজকে মাদকের দিকে ঠেলে দিয়ে দেশটাকে নষ্ট করেছে।”

স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক দীপু হায়দার খান, সদস্য সচিব ভিপি শামীম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তাফা, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীরসহ স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মী।

ফ্যাসিবাদমুক্ত সমাজ গঠনে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিকল্প নেই: মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

 ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেছেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদ তখনই সৃষ্টি হয়, যখন একক ক্ষমতা দখলের সুযোগ থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের আজীবন ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সংবিধানকে বারবার সংশোধন করে দলীয় প্রচারপত্রে পরিণত করে। দেশ, ইসলাম ও মানবতাকে এই অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য জনগণের একমাত্র ভরসা এখন পিআর পদ্ধতির নির্বাচন।”

ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) আসনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা মামুনুর রশিদ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাসুদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা সাইফুল্লাহ মানসুর, ওলামা মাশায়েখ আইম্ম পরিষদের জেলা সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম কাসেমী, শ্রমিক নেতা মনিরুজ্জামানসহ জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম আরও বলেন, “ছাত্র-জনতা জীবন বাজি রেখে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। এখন একটি সুন্দর আগামীর জন্য, আগামী বন্দোবস্ত বিনির্মাণের জন্য রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তৈরি এবং ফলপ্রসূ নির্বাচন প্রয়োজন, যা পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব। পুরোনো বন্দোবস্ত থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণ জিঘাংসা, প্রতিহিংসা বা দৈত্য দানবের রাজনীতিতে ফিরে যেতে চায় না। চাঁদাবাজি ও পাথর দিয়ে মানুষ মারার রাজনীতি আর চায় না।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট, খুনি ও টাকা পাচারকারী শেখ হাসিনা বুঝতেও পারেনি তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। অতীত থেকে শিক্ষা না নিলে এমন পরাজয় বরণ করতে হবে। চাঁদাবাজ, খুনি ও স্বার্থান্বেষীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা এই চাঁদাবাজ, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে।”

জামায়াত নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে: বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু অভিযোগ করেছেন, জামায়াতে ইসলামী তারেক রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী এই দল পিআর (প্রোপোর্শনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির অজুহাতে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। তবে, তাদের এই চেষ্টা সফল হবে না, কারণ দেশের মানুষ এখন নির্বাচনমুখী হয়ে উঠেছে। বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এইচ জে মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, “পিআর, টিআর আমরা বুঝি না। আগে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে, সেই পদ্ধতিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। অন্যথায় এ দেশের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।” তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করেছিল। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তারা মাত্র তিনটি আসন পেয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, “১৯৪৭ সালে জামায়াত পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয়নি, বরং অবিভক্ত ভারতের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। তারা কখনো দেশের পক্ষে কাজ করে না, সব সময় দেশের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করে। আগামী নির্বাচন নিয়েও তারা পিআর পদ্ধতির অজুহাতে ষড়যন্ত্র করছে।”

বুলু জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের জনগণের মনোভাব বুঝে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “একটি নির্বাচিত সরকারই দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের আমলে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।”

তিনি খালেদা জিয়ার প্রশংসা করে বলেন, “খালেদা জিয়ার মতো নেত্রী আর হয় না। তিনি দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনা তাকে জেলে নিয়ে স্লো-পয়জন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে একটি মানচিত্র উপহার দিয়েছেন।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. কামরুল হুদার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম রাজুর সঞ্চালনায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম, কেন্দ্রীয় কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম।

নান্দাইলে এনসিপির চার নেতার একযোগে পদত্যাগ, নীতি ও নৈতিকতার অভাবের অভিযোগ

 ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উপজেলা কমিটি থেকে চার নেতা একযোগে পদত্যাগ করেছেন। দলের নীতি, আদর্শ ও নৈতিকতার অভাবকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে পদত্যাগকারী নেতারা যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী ফাইজুল ইসলামের কাছে লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

পদত্যাগকারী নেতারা হলেন—উপজেলা এনসিপির সমন্বয় কমিটির সদস্য মো. কাওছার আহম্মেদ জিসান, আশেক আলী মণ্ডল, শেখ সাদি ও মোহাম্মদ উল্লাহ।

পদত্যাগপত্রে তারা উল্লেখ করেছেন, “আমরা এই দলের সদস্য হিসেবে বেশ কিছুদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু সংগঠনের নীতি, নৈতিকতা এবং আদর্শ ঠিক না থাকার কারণে আমরা এনসিপির সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী ফাইজুল ইসলাম বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং কারা, কেন পদত্যাগ করেছেন, সে সম্পর্কেও তার কোনো তথ্য নেই।

বিএনপি ও এনসিপির নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত কথার লড়াই: নির্বাচন কমিশন শুনানিতে হট্টগোল

 রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণের শুনানিকে কেন্দ্র করে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর মধ্যে প্রকাশ্য কথার লড়াই তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত রোববার (২৪ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দাবি-আপত্তির আলোচনা চলাকালীন বিএনপি ও এনসিপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এবং পুলিশ সদস্যরা হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, শুনানিতে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ছিল বিএনপির ভোটকেন্দ্র দখলের একটি ‘টেস্ট ম্যাচ’। তিনি রুমিন ফারহানাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বিএনপির মধ্যে অনেকে আছেন, যারা আওয়ামী লীগের থেকেও বেশি আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে অন্যতম রুমিন ফারহানা। তিনি আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, ফ্ল্যাটভোগী এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার চেষ্টাকারী।” তিনি আরও বলেন, “জনগণের পালস বুঝুন, নইলে বাংলাদেশ আবার সংকটের দিকে যাবে।”

তবে, পরবর্তীতে এক ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “নারীর রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই হোক না কেন, তার শরীর, সম্পর্ক বা ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে এনে স্লাটশেমিংয়ের অধিকার কারো নেই। আমি নিজে শ্রেণিঘৃণার শিকার হলেও, রুমিন ফারহানাসহ যেকোনো নারীর প্রতি স্লাটশেমিংয়ের বিরুদ্ধে আমার স্পষ্ট অবস্থান।”

হাসনাতের বক্তব্যের জবাবে সোমবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে রুমিন ফারহানা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি লেখেন, “এটা ওই ফকিন্নির বাচ্চাটা না, যে আমাকে আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক বলেছে?” এই পোস্টে তিনি হাসনাত আবদুল্লাহর ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে কিছু ছবি ও স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। তবে, পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুমিন ফারহানার শেয়ার করা ছাত্রলীগের সেই প্যাডটি ভুয়া। এর আগে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বিরুদ্ধেও একই ধরনের ভুয়া প্যাড ফেসবুকে ছড়িয়েছিল। এমনকি, মজার ছলে কেউ কেউ এই প্যাডে ফুটবলার লিওনেল মেসির নামও যুক্ত করেছিলেন।

এর আগে শুনানির ঘটনা প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা বলেছিলেন, “আমি একজন নারী। শুনানিতে আমাকে প্রথমে ধাক্কা দেওয়া হয়। আমার লোকজন কি বসে থাকবে? তাদের প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক। এটাকে অতিরঞ্জিত করার কিছু নেই।” তিনি আরও বলেন, “১৫ বছর ধরে বিএনপির জন্য লড়াই করেছি, এখন নিজ দলের লোকজনই আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। ঠিক আছে, ধাক্কার বদলে ধাক্কা আসবেই।”

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি দাবি করেন, রুমিন ফারহানার নেতৃত্বে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, “শুনানিতে আমাকে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। পরে প্রবেশ করতে পেরে যখন আমার বক্তব্য রাখতে গিয়েছি, তখন রুমিন ফারহানা ও তার সমর্থকরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে মারধর করেছেন।” তিনি রুমিন ফারহানাকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া, তিনি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুনর্গঠনের দাবি জানান।

রুমিন ফারহানার ফেসবুক পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকে তার বক্তব্যকে ‘অশালীন’ বলে সমালোচনা করেছেন, আবার কেউ কেউ তার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। একইভাবে, হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্কে জড়িয়েছেন। একজন ব্যবহারকারী হাসনাতকে সমর্থন করে বলেন, “তিনি আমাদের ক্যাপ্টেন, ভবিষ্যতের আশার প্রতীক।” অন্যদিকে, আরেকজন ব্যবহারকারী রুমিন ফারহানার অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, “তিনি ১৫ বছর ধরে বিএনপির জন্য লড়েছেন, তার অবদান অস্বীকার করা যায় না।”

এই ঘটনায় রুমিন ফারহানা ও হাসনাত আবদুল্লাহ উভয়েই নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। তবে, তাদের ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কটূ ভাষার ব্যবহার রাজনীতির শালীনতা ও ভদ্রতার প্রশ্ন সামনে এনেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে।

নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, এই ঘটনা আগামী দিনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে, জনগণ ঐক্যবদ্ধ: বিএনপি নেতা আমিনুল হক

 বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। কেউ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে, আবার কেউ বিদেশি প্রভুদের সহযোগিতায় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ এবং তারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া কিছুই মেনে নেবে না।

সোমবার বিকালে রাজধানীর পল্লবী ২ নম্বর কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে জনগণের ঐক্যের বিষয়ে আমিনুল হক বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই নির্বাচনকে বানচাল করার মতো শক্তি কারো নেই।”

তিনি আরও বলেন, “জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কে ক্ষমতায় আসবে। গণতন্ত্রের মূল সৌন্দর্য হলো মতের ভিন্নতা। তাই সমালোচনা ও ভিন্নমতকে ধারণ করার মানসিকতা থাকতে হবে।”

পিআর পদ্ধতি ও নতুন রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কিছু ইসলামিক রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতির দাবি তুলেছে, যার উদ্দেশ্য অল্প ভোট পেয়েও সংসদে আসন নিশ্চিত করা। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখনো এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। আমরা কোনোভাবেই এই পদ্ধতি মেনে নেব না। জনগণকেও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “নতুন কিছু রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই দলগুলো ক্ষমতার মোহে বিদেশি সহযোগিতায় দেশে ষড়যন্ত্র ও অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এই ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না।”

বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার বা অন্যায়-অবিচার করা যাবে না। যদি কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে, তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বিএনপি জনগণের দল। তাই সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। যারা জনগণের সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করে কাজ করবে, তাদেরই আমাদের প্রয়োজন। যারা তা করবে না, তাদের আমাদের দলে কোনো প্রয়োজন নেই।”

সভাটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব হাজী মো. মোস্তফা জামান। সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সদস্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, এবিএমএ রাজ্জাক, আকতার হোসেন, এম কফিল উদ্দিন আহমেদ, হাজী মো. ইউসুফ, তহিরুল ইসলাম তুহিন, শাহআলম, মাহাবুব আলম মন্টু, দারুস সালাম থানা বিএনপি আহ্বায়ক ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ১৪ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এস এ সিদ্দিক সাজু, মহানগর সদস্য আলী আকবর আলী, রেজাউর রহমান ফাহিম, জিয়াউর রহমান জিয়া, আবুল হোসেন আব্দুল, হাফিজুল হাসান শুভ্র, শামীম পারভেজ, নুরুল হুদা ভুঁইয়া নূরু, এমএস আহমাদ আলী, ইব্রাহিম খলিল, মহিলা দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রুনা লায়লা রুনা, তাতীদল সভাপতি শামসুন্নাহার বেগম প্রমুখ।

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দেশকে ফ্যাসিবাদের দিকে নিয়ে যাবে: জামায়াত নেতা

 জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, সংস্কার ছাড়া আগামী নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, কারণ এটি দেশকে আবারও ফ্যাসিবাদের দিকে নিয়ে যাবে। সোমবার রাতে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক প্রীতি সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

ডা. তাহের বলেন, “নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। যারা নির্বাচনের আগে সংস্কার চান না, তাদের মনে অন্য মতলব রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “সংস্কারবিহীন নির্বাচন আওয়ামী জাহেলিয়াত ফিরিয়ে আনবে। বাংলাদেশের জন্য পিআর বা সংখ্যানুপাতিক নীতিই সেরা। এটি সন্ত্রাস ও ভোট চুরি বন্ধ করবে।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সঠিক ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য পিআর-এর কোনো বিকল্প নেই এবং এটিই একমাত্র সমাধান।

এনসিপির হাসনাত আব্দুল্লাহর দাবি: রুমিন ফারহানা হাসিনার পতনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন

 রোববার (২৪ আগস্ট ২০২৫) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, বিএনপির মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে কাজ করছেন, যাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা অন্যতম। তিনি দাবি করেন, হাসিনার পতনে রুমিন ফারহানা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “অতীত কাঠামোতে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা সবসময় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এসেছি। যে ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী পুরো বাংলাদেশ হয়েছে, তা প্রমাণ করে আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে, বিএনপি সেই নির্বাচনে কী ভূমিকা পালন করবে এবং পুলিশ যে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “রুমিন ফারহানা হাসিনার কাছে ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করেছিলেন। হাসিনার পতনে তিনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের থেকেও বেশি আওয়ামী লীগের পণ্য হিসেবে যাদের মনে হয়, তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা অন্যতম। তিনি সবসময় বলেন, গত ১৫ বছর তিনি নাকি খুব ভালো ছিলেন। অবশ্যই তিনি ভালো থাকবেন, কারণ আওয়ামী লীগের সব ধরনের সুবিধা তিনি গ্রহণ করেছেন।”

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে হাসনাত বলেন, “আমরা সবসময় ইসির ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এসেছি। আজও পুলিশকে নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখেছি।” তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের নির্বাচন কমিশনে প্রবেশে বাধা দিয়েছে, কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের অবাধে প্রবেশ-প্রস্থানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এই নির্বাচন কমিশন কতিপয় রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে।”

হাসনাত আরও বলেন, “আমরা বারবার বলে এসেছি, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক উত্তরণের অপেক্ষায় রয়েছে, কিন্তু তারা গুন্ডাতন্ত্রের দিকে ফিরে যেতে চায় না। মানুষ আরেকটি এক-এগারোর মতো পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছে না।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে বস্তুনিষ্ঠ ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে।

তারেক রহমান নির্বাচনের পর দেশ পরিচালনার পরিকল্পনা করছেন: শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি

 বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী নির্বাচনের পর জনগণের সমর্থন নিয়ে দলের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করছেন। তিনি জানান, তারেক রহমান লন্ডনে বসে জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন এবং নভেম্বরের মধ্যে তাকে দেশে কাছাকাছি দেখার সম্ভাবনা রয়েছে।

রোববার (২৪ আগস্ট) লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, “তারেক রহমান দেশে আসবেন। তিনি দেশে আসার আগে দুর্নীতি বন্ধ, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং বিভিন্ন কাজের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করছেন। আমরা যদি অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তাহলে মানুষ বলবে, হাসিনা যা করেছে, বিএনপি তা করতে পারেনি। এজন্য তারেক রহমান বিভিন্ন রকম প্ল্যান নিয়েছেন।” তিনি আরও জানান, কিছু মামলার জটিলতা থাকলেও তারেক রহমানের দেশে আসার পথে তেমন কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ, নভেম্বরের মধ্যে আমরা তাকে কাছাকাছি দেখতে পারব।”

কমলনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম কাদেরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুনের রহমান শামীম এবং প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির সহ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়

জি এম কাদেরের তীব্র সমালোচনা: ‘দেশে নব্য ফ্যাসিবাদ, বিরোধী কণ্ঠ রোধ করছে সরকার’

জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “ভজকটভাবে দেশ চলছে। কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না, কে দেশ চালাচ্ছে? সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার আছে। সেই সরকারই নাকি দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”

শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। পরে দলের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

জি এম কাদের বলেন, “সরকারি দলও নাকি অনেকগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। কোনো নিবন্ধন নেই, এমন দলের কিছু অংশ সরকারে, আর কিছু অংশ বাইরে আছে। তারা সরকারি দলের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। তাদের বক্তব্য ও বিবৃতি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করছে।” তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো বড় দলগুলোও সরকারি দলের মতো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। এমনকি এমন কিছু ছোট দল, যারা কখনো নির্বাচন করেনি বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেনি, তারাও সরকারি সুবিধা ভোগ করছে।

দেশে কার্যত বিরোধী কণ্ঠস্বর নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকারি দলগুলোর বাইরে যেসব দল আছে, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়ে রহস্য রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষ কি এই কয়েকটি দলের সমর্থক? সবাই কি এই দলগুলোকেই ভোট দেবে? দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এই সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরোধী।”

জাতীয় পার্টিকে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, “এ কারণেই জাতীয় পার্টির ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চলছে। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। সরকার জাতীয় পার্টির কণ্ঠ রোধ করতে চায়।” তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সরকারও বিরোধী কণ্ঠস্বর সহ্য করতে পারে না। আপনারা শেখ হাসিনার মতো একই কাজ করছেন। ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন। এই সরকার নব্য ফ্যাসিবাদের প্রতীক।”

নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নেই দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন চেয়েছিলাম, যা দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছিল না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছিলাম, যাতে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু আমরা দেখছি, দেশে অন্যায় ও অবিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন পরিচালনার জন্য উপযুক্ত নয়। “এই সরকার প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ সব বিভাগের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। অনেককে মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। খালি পদগুলোতে নিজস্ব লোক নিয়োগ দিয়ে দলীয়করণ করা হচ্ছে। অবাধ নির্বাচনের জন্য সবাইকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।”

সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি একাংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী, কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর, সাইফুদ্দিন আহমেদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার, এমরান হোসেন মিয়া, এইচ এম শাহরিয়ার, মহসিনুল ইসলাম, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান, মেহেরুন্নেসা খান, মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ প্রমুখ। সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, মনিরুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিনসহ অনেকে।

খুলনার ডুমুরিয়ায় যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, তদন্তে পুলিশ

 খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইল এলাকায় ভাড়া বাড়িতে ঢুকে মো. শামীম হোসেন (৩৩) নামে যুবদলের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সৈয়দ ঈসা কলেজের পাশে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শামীম হোসেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের উথুলি গ্রামের আব্দুল গফ্ফার শেখের ছেলে এবং সাবেক ইউপি সদস্য। তিনি তালা ইসলামকাটি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শামীম দীর্ঘদিন ধরে ডুমুরিয়ার আঠারো মাইল এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে কীটনাশকের ব্যবসা করতেন।

তালা উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, “এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। আমরা হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।”

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, “খবর পাওয়ার পর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।”

বিচারককে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে পটুয়াখালীর পাবলিক প্রসিকিউটরের সদস্যপদ স্থগিত, তদন্ত কমিটি গঠন

পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা রোকন সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমিন শিকদারের বিরুদ্ধে বিচারককে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাকে দলীয় দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে এবং অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম আল কায়ছারীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে পেশাগত অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা ও পৌর জামায়াত নেতারা জরুরি সভায় বসেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তার সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম আল কায়ছারী বলেন, “আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। যদিও সরাসরি নিশ্চিত তথ্য পাইনি, তবু যেহেতু জেলা আইনজীবী সমিতি তার সদস্যপদ স্থগিত করেছে, তাই আমরাও একই পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে কলাপাড়ায় একটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার (মামলা নং ২৬১/২৫) আসামির জামিনের জন্য বিচারক নীলুফার শিরিনের বাসায় ৫০ হাজার টাকা সংবলিত একটি খাম ও মামলার নথিপত্র পাঠান রুহুল আমিন। এ ঘটনায় বিচারক নিজেকে অপমানিত বোধ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, এর আগেও একই মামলার এক আসামির জামিনের জন্য রুহুল আমিন তাকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এবার সরাসরি ঘুষ পাঠানোয় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে বাধ্য হন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, রুহুল আমিন পূর্বেও বিভিন্ন মামলায় আসামিপক্ষের পক্ষে তদবির করেছেন এবং আদালতের আদেশ প্রত্যাশামতো না হলে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেছেন। বিশেষ করে, আলোচিত ‘জুলাই শহীদ জসিম কন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলা’ (মামলা নং ৩৭/২৫)-এ তিনি আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার জেলা আইনজীবী সমিতি জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে রুহুল আমিনের প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত করা হয় এবং তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। সমিতির লিখিত সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), আইন মন্ত্রণালয় এবং প্রধান বিচারপতির কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে, অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি পাবলিক প্রসিকিউটর হওয়ার পর থেকেই নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি। এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”

জাতীয় নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর ঐক্য প্রচেষ্টা: জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব

 দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এই নির্বাচনে তাদের সম্ভাব্য অনুপস্থিতিতে ভোটারদের কাছে বিএনপির বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে ইসলামি দলগুলো। তারা এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে, ইসলামি দলগুলোর অতীত ঐক্যের ইতিহাস সুখকর নয়, ফলে এবারের ঐক্য প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, নাকি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।

অধিকাংশ ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। এসব দলের নেতারা সরাসরি জোটের বিষয়ে কিছু না বললেও জামায়াতের সঙ্গে তাদের আদর্শ ও চিন্তাধারার পার্থক্য তুলে ধরছেন। ফলে জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ে একটি বৃহৎ জোট গঠনের আলোচনা চললেও তা সহজ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, জোট বা সমঝোতার বিষয়টি এখনো টেবিল আলোচনায় সীমাবদ্ধ। নির্বাচন যত কাছে আসছে, বৃহৎ জোট নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় বাড়ছে। এ অবস্থায় সব দল মিলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলে মনে করছেন অনেক ইসলামি দলের নেতা।

কিছু নেতা জামায়াতের সঙ্গে জোট না করার বিষয়টি প্রকাশ্যে বলতে না চাইলেও পৃথক ইসলামি জোট গঠনের চিন্তা করছেন। তবে জামায়াতে ইসলামী এখনো জোট গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী। অন্যদিকে, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনে সক্রিয়। অতীতের বৈরিতা ভুলে এই দুই দলের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠেছে, বিশেষ করে পিআর ইস্যুতে তাদের একই সুরে কথা বলতে দেখা গেছে। এটি ঐক্য প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, “জামায়াতে ইসলামী দেশের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চায়। আমাদের সঙ্গে সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন আছে। আগামী নির্বাচনে সব ইসলামি দল নিয়ে বৃহৎ জোট গঠনের জন্য আমরা কাজ করছি। আলেম-ওলামা ও ইসলামি রাজনীতিকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচন যত কাছে আসবে, আমাদের এই প্রক্রিয়া তত দৃশ্যমান হবে।” জামায়াতের সঙ্গে জোটে অনীহার প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি। আরও সময় গেলে শক্তিশালী ঐক্য বা সমঝোতা দেখতে পাবেন।”

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফিন্দী বলেন, “দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জামায়াতের সঙ্গে জোট বা সমঝোতার সম্ভাবনা দেখি না। এখনো আমরা কোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিইনি।” তবে, তারা জামায়াত ছাড়া সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকলেও জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাচ্ছি না। ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতা নিয়ে বৈঠক হয়েছে, কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে কোনো অফিশিয়াল আলোচনা হয়নি। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের চিন্তাধারার পার্থক্য বিরাট।”

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী বলেন, “মাঠপর্যায়ে জামায়াতের ব্যাপারে আলেমদের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আলেমদের মতামতের বাইরে আমরা যাব না।” বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও আমরা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছি।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, “চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে আমরা সব সময় ঐক্যের পক্ষে। জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে অফিশিয়াল কোনো বৈঠক হয়নি। আমরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার পক্ষের দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছি।”

বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ইসলামি রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১০টি। এ ছাড়া কয়েকটি অনিবন্ধিত ছোট দলও সক্রিয়। অতীতে ঐক্য গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ হলেও, ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসলামি দলগুলোর ঐক্যচেষ্টার আলোচনা আবারও সামনে এসেছে।

কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহার কলকাতায় লুকিয়ে আছেন: পূর্নিমা রানী শীলের অভিযোগ

 কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার, যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন, তিনি তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনাকে নিয়ে কলকাতায় লুকিয়ে আছেন বলে দাবি করেছেন পূর্নিমা রানী শীল লগ্নজিতা নামে এক তরুণী।

শনিবার (২৩ আগস্ট) এক ফেসবুক পোস্টে পূর্নিমা লিখেছেন, “বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এবং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এই সেই কুকুর যে কি না আওয়ামী লীগের খেয়ে পরে মোদির সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় কাট মোল্লা নিয়ে মিছিল করে সে কেন ভারতের মাটিতে। আর বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায় জীবন বাঁচতে যেতে চায় তখন ভিসা দরকার ছি!”

তিনি আরও লিখেছেন, “২০২১ সালে বাংলাদেশে দুর্গাপূজায় হামলার পেছনে বাংলাদেশি আওয়ামী লীগ নেতা বাহার উদ্দিন বাহার যিনি পূজা মণ্ডপে কোরআন রেখেছিলেন। তখন সারা বাংলাদেশে পুজোর বারোটা বাজিয়েছিল। তিনি এখন তার মেয়েকে নিয়ে কলকাতার রাজারহাট নিউটাউনে লুকিয়ে আছেন...।”

পূর্নিমা রানী শীল আরও বলেন, “এই বাংলাদেশি রাজাকার আলবদরকে কোনো রকম সাপোর্ট করা কি ভারত সরকারের উচিৎ? অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক... রাজ্যে ও কেন্দ্র উভয় সরকারকে আবেদন জানাচ্ছি...! আমি জানি এটি পৌঁছাতে পারবে কি না। তবে তাকে প্রশ্ন করা হোক, কোন কারণে এগুলো করেছে।”

জনগণের টাকায় বিলাসিতা বিশ্বাসঘাতকতা: নীলা ইস্রাফিলের প্রতিক্রিয়া

 জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারোয়ার তুষারের বক্তব্যের জবাবে দলের আরেক নেত্রী নীলা ইস্রাফিল বলেছেন, জনগণের টাকায় বিলাসিতা করা কোনো রাজনৈতিক অর্জন নয়, বরং এটি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। শুক্রবার (২২ আগস্ট) তিনি নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি গণমাধ্যমের পোস্টকার্ড শেয়ার করে এ মন্তব্য করেন। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন:

“অবশ্যই যাওয়া যায়, কিন্তু সেটা হতে হবে ব্যক্তিগত আয়ে অর্জিত টাকায়, জনগণের ঘামঝরা করের টাকায় নয়। জনগণের টাকায় বিলাস করা কোনো রাজনৈতিক অর্জন নয়, বরং জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নামে যারা জনগণের অর্থ অপচয় করে ব্যক্তিগত সুনাম বা বিলাসিতা বাড়াতে চান, তারা প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতার চেতনাকে হত্যা করেন।”
তিনি আরও বলেন, “সত্যিকারের নেতৃত্ব মানে জনগণের সম্পদের পাহারাদার হওয়া, তাদের ঘামের টাকাকে মর্যাদা দেওয়া। যদি কেউ হাঁসের মাংস খেতে পাঁচ তারকা হোটেলে বন্ধুদের নিয়ে যান, যেতেই পারেন, কিন্তু সেটা যেন নিজের কষ্টার্জিত আয়ে হয়। তাহলেই সম্মান থাকে, জনগণের কাছে আস্থা থাকে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মর্যাদা জনগণের টাকায় নয়, বরং জনগণের স্বার্থ রক্ষার মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়।”

নীলা ইস্রাফিল প্রশ্ন তুলে বলেন, “যে উপদেষ্টা নিজের সামান্য বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খায়, সে কীভাবে ৫/৬ জনকে নিয়ে ওয়েস্টিনের মতো ফাইভ স্টার হোটেলে হাঁসের মাংস খায়? এ খরচটা কি তার ব্যক্তিগত উপার্জন দিয়ে, নাকি জনগণের ঘামের টাকায়? জনগণের টাকায় বিলাসিতা করলে সেটা উপদেশ নয়, সেটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। যে দেশের সাধারণ মানুষ এক মুঠো ভাতের জন্য লড়াই করে, সেখানে উপদেষ্টারা ফাইভ স্টারের টেবিলে হাঁসের মাংস চিবিয়ে রাজনীতির আড্ডা দেবে, এটা লজ্জাজনক, এটা বিশ্বাসঘাতকতা।”
এর আগে, গত ১৫ আগস্ট সারোয়ার তুষার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক অর্জন ছাড়াই পার্থ সাহেব ওয়েস্টিনে যেতে পারবেন, কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে হাসিনা ও আওয়ামীমুক্ত করে নতুন সরকার গঠন করে দুটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আসিফ সাহেব ওয়েস্টিনে যেতে পারবেন না। যেতে হলে পার্থ সাহেবদের ক্লিয়ারেন্স লাগবে। তিনি আরও লিখেছেন, “আগে ক্যান্টিনে ভাত খুঁজত, আর এখন ওয়েস্টিনে হাঁস খোঁজে—যেন এর মাঝখানে কিছু ঘটে নাই।”

সারোয়ার তুষারের মতে, পার্থ সাহেব মানতে পারছেন না যে কোনো পারিবারিক লিগ্যাসি ছাড়া একজন ছাত্রনেতা বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের সাধারণের ছেলেমেয়েরা কেন রাষ্ট্র চালাবে? রাষ্ট্র চালাবেন পার্থ সাহেবের বাবা এবং সেই পারিবারিক সূত্রে পার্থ সাহেব।” তিনি আরও বলেন, “আপনারা চান বারবার নব্বই ঘটুক, ছাত্রদের বুকের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দিক সামরিক স্বৈরাচার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করুক ফ্যাসিবাদী গণহত্যাকারী। ছাত্ররা কেন ক্ষমতার হিস্যা বুঝে নেবে? তারা আজীবন ক্যান্টিনের পাতলা ডাল খাবে আর গণরুমের নির্যাতনের শিকার হবে।”

তিনি পার্থ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনার বক্তব্যে দগদগে শ্রেণিঘৃণা। কিন্তু আপনাদের শ্রেণি উত্তরণ কীভাবে ঘটল, সেইটা ঘাঁটাঘাঁটি করলে বড় অপ্রিয় সত্য বের হয়ে আসে।”

বিএনপি যুগ্ম মহাসচিবের আহ্বান: রাজনীতি সেবার জন্য, মোড়লগিরি নয়

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন রাজনীতি করতে হবে সেবা ও সম্মানের জন্য। তিনি বলেছেন, কেউ নেতা হয়ে মোড়লগিরি করবে এমন ভাব থেকে সরে আসতে হবে এবং ইনকাম করার জন্য রাজনীতি করা যাবে না।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি। এ্যানি উল্লেখ করেন, ৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন লালন করে খালেদা জিয়ার মতো আপসহীনভাবে কাজ করার চিন্তা করছেন তারেক রহমান। তিনি আমাদেরকে নতুন ধারার রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা উপহার দেবেন।

তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি, এটা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের চিরদিন মনে রাখতে হবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কথা, তার কথা ভুলে যাওয়া যাবে না। আগের ধারার রাজনীতি চলবে না, ১৭ বছরের ট্রেন্ডও চলবে না।

বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেনের নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন অনতিবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা-বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি উত্থাপন করেন।

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আর বিলম্ব নয়। ড. ইউনূস স্যারের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগের মধ্যে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যে রিকোয়েস্ট করেছেন, আমরা চাই, অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুক।” তিনি নির্বাচন নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন দাবি ও বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “আপনারা বলেন, পিআর না হলে নির্বাচনে যাব না। আপনি যে এই কথাটি বলেন, এর ইমপ্লিকেশন চিন্তা করেছেন? আজকে যদি নির্বাচন বিলম্বিত হয়, নির্বাচন যথাসময়ে না হয় তাহলে লাভ কাদের? লাভ হচ্ছে পতিত স্বৈরাচারে রয়ে যাওয়া সুবিধাভোগীদের, যারা প্রশাসনে, বিচারালয়ে, ব্যবসা কেন্দ্রে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।”

ডা. জাহিদ আরও বলেন, “তারা দেশে এবং দেশের বাইরে বসে তাদের নেত্রী যে ষড়যন্ত্র করছে নির্বাচন হতে দেবে না, এটা করতে দেবে না—এর ফলে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তাহলে লাভ কাদের? লাভ হবে পলায়নকৃত স্বৈরাচারের। আপনারা যারা বুঝে বা বুঝে না বিভিন্ন দাবি তুলে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চান, তারা কি প্রকারান্তরে স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করছেন, সেটি কি বিবেচনা করেছেন?” তিনি জানান, “আজকে যদি স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করা হয় এবং আপনাদের কর্মসূচির কারণে নির্বাচন হয় কি না, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আশঙ্কা জমে, তাহলে লাভবান হবে পলায়নকৃত স্বৈরাচার। এর জন্য কি আপনারা ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই করেছিলেন?”

বিএনপি নেতা সেলিম ভূঁইয়াকে দুর্নীতি মামলায় খালাস

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন তথা দুর্নীতির মামলায় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়াকে খালাস দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাশেম এই রায় ঘোষণা করেন।

সেলিম ভূঁইয়ার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ জুন, যখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ রমনা মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় যে, সেলিম ভূঁইয়া দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৪১৩ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে এক কোটি ৩১ লাখ ৮৮৩ টাকার সম্পদের উৎস প্রমাণ করতে ব্যর্থতার কারণে তা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০২৩ সালের ২৪ অগাস্ট সেলিম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ১০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ ঘোষণা করলেন ৮ নেতা

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করেছেন ৮ নেতা।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় উপজেলার ননীক্ষীর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগকারী নেতারা হলেন ননীক্ষির ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনজ মৌলিক, কাজী মিজানুর রহমান, সহপ্রচার সম্পাদক রাসেল শেখ, সদস্য স্বপন শেখ, ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুর আলম মিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক সুবল রায়, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আক্কাচ চোকদার এবং ননীক্ষির ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জলিল কাজী।

সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগকারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ননীক্ষির ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনজ মৌলিক। তিনি বলেন, “আমরা ননীক্ষীর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে অব্যাহতি নিচ্ছি। আমরা দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছি যে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের স্বার্থরক্ষায় সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাব। আজ থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না।”

গোলাম মাওলা রনির দ্বিতীয় বিয়ের কেলেঙ্কারি: সম্পত্তির লোভে প্রতারণার অভিযোগ, অডিও ফাঁসে তোলপাড়

পটুয়াখালী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের একটি ভিডিওবার্তায় রনির বিরুদ্ধে সম্পত্তির লোভে দুই সন্তানের মাকে প্রতারণা করে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। এতে ফারজানা আফরোজ নামে এক নারীর সঙ্গে রনির কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও ফাঁস করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা যায়নি, এবং রনির পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।


ইলিয়াস হোসেনের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, রনি ২০০৯ সাল থেকে ফারজানার পেছনে লেগেছিলেন। ২০১৮ সালে তাকে তার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন, এবং ২০২২ সালে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ফারজানার কাছে সম্পত্তি দাবি করেন রনি, কিন্তু না পেয়ে সম্প্রতি তাকে তালাক দিয়েছেন। ফারজানার বক্তব্য অনুসারে, রনি তাকে বারবার বিয়ের প্রস্তাব দিতেন, যদিও তিনি স্বামী থাকা সত্ত্বেও। ফারজানা বলেন, “রনি আমাকে কখনো প্রেমের অফার করেনি, কিন্তু বিয়ে করতে চাইত। আমি বলতাম, আমার স্বামী আছে, আমি ভালো আছি।” পরে তারা হোটেল রেডিসনে বিয়ে করেন, কিন্তু রনির পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে তিনি এড়িয়ে যান।


ফারজানা আরও অভিযোগ করেন, রনির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ‘অরুণাপল্লী’ নামে একটি বিলাসবহুল বাড়ি তার জন্য বানানো হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন রনি। কিন্তু বিয়ের পর তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা সেখানে গিয়ে রাগারাগি করে চলে আসেন। দেড় মাস আগে ফারজানা রনির অফিসে গেলে তাকে বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পুলিশ ডাকার হুমকি দেন। পুলিশ এলে রনি দাবি করেন, ফারজানা তাকে হিপনোটাইজ করে চট্টগ্রাম নিয়ে গিয়ে বিয়ে করিয়েছেন, এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। ফারজানা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “তুমি সাত বছরের বাচ্চা? আমি তোমাকে হিপনোটাইজ করেছি?” পরে পুলিশের সামনে ঘটনা খুলে বললে রনিকে বোঝানো হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেন।


ইলিয়াস হোসেনের ভিডিওতে আরও বলা হয়, ফারজানার কোনো ভাই নেই, মা-বাবা নেই, এবং তার বোনেরা আমেরিকায় থাকেন। ফারজানা দেশে থেকে তাদের সম্পত্তি দেখাশোনা করেন, এবং রনি এই সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই এসব করেছেন। ইলিয়াসের ফেসবুক পোস্টে রনিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফারজানাকে ডিভোর্স না করলে আরও তথ্য ফাঁসের হুমকি দেওয়া হয়েছে।


তবে এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। কয়েকটি ইউটিউব ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, ইলিয়াস হোসেন রনিকে ছোট করতে গিয়ে উলটো তার ভালো মানুষ হওয়া প্রমাণিত হয়েছে। অন্য এক ভিডিওতে রনির পক্ষ থেকে ইলিয়াসকে অনৈতিক আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে, এবং এর ফলে রনি কী পুরস্কার পেলেন তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আরেকটি ভিডিওতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কেন এমন নোংরামি চলছে রনি ও ইলিয়াসের মধ্যে। মিডিয়া সূত্রগুলোতে এ অভিযোগগুলোকে একপক্ষীয় বলে মনে করা হচ্ছে, এবং সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।


গোলাম মাওলা রনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব থাকলেও এ অভিযোগের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। ঘটনার তদন্তের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে, এবং এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরে প্রভাব ফেলতে পারে। আরও তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতিক্রিয়া অপেক্ষা করা হচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনে ২৭৩ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল, ছাত্রী হলে প্রার্থী কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে ২৭৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের ৩১৫টি পদের জন্য ৪৬৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ছাত্রীদের ১০টি হলে পদের তুলনায় প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এর মধ্যে পাঁচটি হলে নির্ধারিত পদের সমান প্রার্থীও পাওয়া যায়নি।

মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা। নির্ধারিত সময় শেষে জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মনোনয়নপত্র দাখিলের তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম। তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে।”

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকসুর ২৫টি পদে ও ২১টি আবাসিক হলের ৩১৫টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ২৯ আগস্ট প্রকাশ করা হবে।

ছাত্রী হলে প্রার্থী কম

ছাত্রী হলগুলোতে প্রার্থীর সংখ্যা কম থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, হল সংসদে ১৫টি পদে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৫টি পদের জন্য পর্যাপ্ত প্রার্থী পাওয়া যায়নি। বাকি হলগুলোতেও প্রার্থীর সংখ্যা পদের তুলনায় অনেক কম। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ৬ জন, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৬ জন, সুফিয়া কামাল হলে ১০ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১১ জন এবং প্রীতিলতা হলে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ফজিলাতুন্নেছা হলে ১৫ জন, জাহানারা ইমাম হলে ১৬ জন এবং ১৫ নম্বর ছাত্রী হল, বীর প্রতীক তারামন বিবি হল ও রোকেয়া হলে ১৭ জন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এসব হলের বেশির ভাগ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচন হতে পারে।

১৫ নম্বর ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বহ্নি আহমেদ বলেন, “আমার হলে ১৫টি পদে মাত্র ১৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় অনেকে প্রত্যাহার করতে পারেন। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা খুবই কম।”

ছাত্রী হলে প্রার্থী কম হওয়ার কারণ

ছাত্রী হলে প্রার্থী কম হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্তত চারজন প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেননি। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অনেক ছাত্রীর পড়াশোনা শেষ হওয়ায় তাঁরা ভোটার হতে পারেননি, ফলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, “গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হল সংসদ চালাতে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য থাকলেই চলে। সে হিসেবে ৬ জন সদস্য নির্বাচিত থাকলেই হল সংসদ চলমান রাখা সম্ভব। তবে জাকসুর গঠনতন্ত্রে শূন্য পদে পুনরায় নির্বাচনের বিধান থাকলেও হল সংসদের গঠনতন্ত্রে এমন কোনো বিধান নেই।”

ছাত্র হলে প্রার্থী বেশি

ছাত্র হলগুলোতে প্রার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ১৫টি পদের বিপরীতে ৬০ জন এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া আল-বেরুনী হলে ১৮ জন, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ২২ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৩০ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ২২ জন, মওলানা ভাসানী হলে ২৭ জন, ১০ নম্বর ছাত্র হলে ৩০ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ২১ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ২২ জন এবং ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৩৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ছাত্রশিবিরের প্যানেল ঘোষণা

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এর ব্যানারে প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। গতকাল পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সহসভাপতি পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য আরিফুল্লাহ আদিব এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অফিস সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মুহিবুর রহমান বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা পালনকারী ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবং ৬ জন নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন।”

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও ছাত্রদল

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জানিয়েছে, তাদের প্যানেলের নাম হবে ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’। বামপন্থী সংগঠন ও সাংস্কৃতিক জোটের একাধিক প্যানেল হতে পারে। ছাত্রদলের প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, “আমাদের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। রোববার আমরা প্যানেল ঘোষণা করব।”

শেরপুরের নকলায় এনসিপির উপজেলা কমিটি থেকে ১৫ নেতার একযোগে পদত্যাগ

 শেরপুরের নকলা উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর নবগঠিত উপজেলা সমন্বয় কমিটি থেকে একযোগে ১৫ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারীদের মধ্যে ৫ জন যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং ১০ জন সদস্য রয়েছেন। তারা নবগঠিত কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির আকাশকে ‘অযোগ্য, অনাদর্শিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য’ দাবি করে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট ২০২৫) রাতে নকলা সরকারি হাজি জালমামুদ কলেজ রোডের একটি বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

পদত্যাগকারী নেতারা হলেন—যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. মমিনুল ইসলাম আরব, মনিরুল ইসলাম মনির, সিরাজুল ইসলাম সোহাগ, রাশিদুল জামান রাসেল ও জসীম উদ্দীন এবং সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন, সোহেল রানা, জাহাঙ্গীর আলম, সোহাগ মোল্লা, আলামিন মিয়া, রতন মিয়া, নাজমুল হাসান, সুমন মিয়া, আরিফ মিয়া এবং সাদেকুল ইসলাম শান্ত।

সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগকারী নেতারা বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টির নকলা উপজেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির আকাশ একজন অযোগ্য, অনাদর্শিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। এই প্রেক্ষাপটে আত্মবিশ্লেষণের পর আমরা সম্মিলিতভাবে এবং স্বেচ্ছায় উপজেলা সমন্বয় কমিটির স্ব-স্ব পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং পুরো কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি।”

পদত্যাগকারী যুগ্ম সমন্বয়কারী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “নকলায় যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে প্রধান সমন্বয়কারীকে নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এনসিপির ত্যাগী নেতাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই আমরা ১৫ জন এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগপত্রগুলো এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।”

অন্যদিকে, পদত্যাগকারী আরেক নেতা মমিনুল ইসলাম আরব দাবি করেন, “প্রধান সমন্বয়কারীর বিরুদ্ধে শহীদ পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতাও সন্তোষজনক নয়। এসব গুরুতর অভিযোগের কারণে আমরা পদত্যাগ করেছি।”

এই অভিযোগের জবাবে নকলা উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী মো. হুমায়ুন কবির আকাশ বলেন, “এই পদত্যাগের ঘটনা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজানো হয়েছে। আমি তাদের পদত্যাগপত্রের কোনো কাগজপত্র পাইনি। সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে পদত্যাগপত্র না দিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে সব বিষয় পরিষ্কার করা হবে।”

শেরপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মো. লিখন মিয়া এই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “যারা পদত্যাগ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তাদের কোনো লিখিত কাগজপত্র আমার হাতে আসেনি। পদত্যাগপত্রে চার থেকে পাঁচজনের স্বাক্ষর থাকলেও বাকিদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। এটি দ্রুত উন্মোচন করা হবে।”

উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের স্বাক্ষরে ৩২ সদস্যবিশিষ্ট নকলা উপজেলা সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে হুমায়ুন কবির আকাশকে প্রধান সমন্বয়কারী, ১০ জনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী এবং ২১ জনকে সদস্য করা হয়। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত এই গণপদত্যাগের ঘটনায় রূপ নেয়।

এ বিষয়ে শেরপুর জেলা এনসিপির ১ নম্বর সমন্বয়কারী আলমগীর কবির বলেন, “পদত্যাগের বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখেছি। বিভাগীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জেলা কমিটি বসে এটি মূল্যায়ন করবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে বিএনপির মতামত জমা


জুলাই সনদ নিয়ে দলীয় মতামত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বরাত দিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

এর আগে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিল, দলটি ২১ আগস্ট মতামত জমা দেবে। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই মতামত জমা দিল তারা।

রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধে জুলাই সনদের খসড়ার ওপর মতামত জানানোর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, আগামী ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত মতামত জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর চূড়ান্ত খসড়া পাঠায়। তখন দলগুলোকে ২০ আগস্টের মধ্যে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতির ছবি নিয়ে ব্যস্ততার চেয়ে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন: রুমিন ফারহানা

 বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, রাষ্ট্রপতির ছবি থাকবে কি থাকবে না, এ নিয়ে সরকার যতটা ব্যস্ত, তার চেয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী হলে দেশ আরও সঠিক পথে এগোত।

বুধবার (২০ আগস্ট) জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামালের সঞ্চালনায় ‘অন্য মঞ্চে’র অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

রুমিন ফারহানা বলেন, “গত এক বছরে রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা, গত ১৫ বছরের বিভাজন বন্ধ করা, আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল করা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ না দিয়ে সরকার ছোটখাটো বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে। যেমন, রাষ্ট্রপতির পোর্ট্রেট ব্যাপারটাই ধরুন। এই পোর্ট্রেট সরানো কেন হলো, আমরা কেউ জানি না। কেউ না জানলেও চুপে চুপে একটা মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হলো, এটার অর্থ কী? যদি ‘নো পোর্ট্রেট’ নীতি নেওয়া হয়, তাহলে প্রজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের জানানো উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো পোর্ট্রেট না থাকে, তাহলে ঠিক আছে। যদি কোনো রাজনৈতিক দল এটাকে সমর্থন করে, তাহলে আমি আশা করব, ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতায় গেলেও ‘নো পোর্ট্রেট’ নীতি মেনে চলবে। আমরা নিশ্চিতভাবে এটাই আশা করব।”

তিনি বলেন, “আমরা এখন টুকটাক ভিত্তিতে কাজ করছি। যেটা সামনে আসছে, তা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল—৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে আজ ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত—আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, নির্বাচনের রোডম্যাপ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কাজ করা। কিন্তু এসব জায়গায় আমরা কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। যদি সরকার আইনশৃঙ্খলা ঠিক করতে, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, একজন ভালো উপদেষ্টাকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব দিতে এবং নির্বাচনের জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে মনোযোগী হতো, তাহলে দেশ আরও সঠিক পথে এগোত।”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণ মানুষ, যারা রাজনীতির সঙ্�গে জড়িত নয়, তারা ভীত। তারা বলছেন, দ্রুত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রয়োজন। যে সরকারই আসুক, তা অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো। আমরা ৫৩ বছর ধরে রাজনৈতিক নেতাদের শাসন দেখেছি, আবার গত এক বছরে অরাজনৈতিক উচ্চশিক্ষিত মানুষের শাসনও দেখলাম। মানুষ নিজেরাই এদের তুলনা করতে পারে।”

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অনেক কারণ আছে। মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা, অপেক্ষা ও উচ্ছ্বাস থাকার কথা, কিন্তু আমরা এখনো সেই আমেজ দেখতে পাচ্ছি না। যদিও ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। কিন্তু মানুষ এই কথা বিশ্বাস করছে না।”

আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অদ্ভুত ঘটনার ইঙ্গিত বিএনপি নেতা হাফিজের

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মেজর হাফিজ বলেন, “সারা পৃথিবীতে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। কিন্তু বাংলাদেশে তা করছে একদল অনির্বাচিত লোক। যারা কেউ আমেরিকা থেকে, কেউ লন্ডন থেকে কিংবা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে। যাদের গত ১৭ বছরের সংগ্রামে কোনো অংশগ্রহণ নেই, জুলাই অভ্যুত্থানে কোনো অংশগ্রহণ নেই, তারা বাংলাদেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিতে চায়।”

তিনি আরও বলেন, “একাত্তরে রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সেই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন আমাদের নেতা মেজর জিয়াউর রহমান। রাজনৈতিক দলগুলো যখন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে, জনগণকে আশার বাণী শোনানোর জন্য কাউকে যখন খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেই মাহেন্দ্রক্ষণে জনতার কণ্ঠস্বর হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান।”

তারুণ্যের শক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিশ্ববাসী মাথাপিছু আয় দেখিয়ে আমাদের দরিদ্র দেশের কাতারে ফেলতে চায়। কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকার বহু পরাশক্তি, যাদের রিজার্ভে বহু ডলার থাকে, বাংলাদেশ তাদের চেয়ে অনেক ধনী। কারণ, বাংলাদেশে আবু সাঈদের মতো সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে।”

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “নিরস্ত্র হয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতে পারে, এরকম উদাহরণ পৃথিবীতে বেশি নেই। বিশেষত এসব পরাশক্তি, যারা বহু গর্বে গর্বিত, তাদের মধ্যে তো মোটেও নেই। সুতরাং আমাদেরও গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে।”

অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

 
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী ৩১ আগস্ট দুপুর ২টায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল দিন ১ সেপ্টেম্বর ভোরে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর সকাল ১১টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। একই দিনে দেশব্যাপী মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

২ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হবে। এছাড়া, ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে আলোচনা সভা ও র‌্যালির আয়োজন করা হবে। ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপি বৃক্ষরোপণ, মাছ অবমুক্তকরণসহ বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ‘জাতীয় উদযাপন কমিটির’ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি ও সংস্কারের দাবি: চরমোনাই পীরের হুঁশিয়ারি, ‘আগের নিয়মে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’

 ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি প্রদান ও কাক্সিক্ষত সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে পূর্বের নিয়মে জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, “দেশ যখন আগুনের মতো জ্বলছিল, তখন অন্যায়, খুনখারাবি ও বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে দেশকে উদ্ধার করেছে। যদি কোনো অশুভ চক্র চাপ প্রয়োগ করে প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কারের আগে নির্বাচন ঘোষণায় বাধ্য করে, তাহলে পরিষ্কার বলছি—আমরা ছাত্র-জনতা রাজপথ ছাড়িনি। যতদিন আইনশৃঙ্খলা সুন্দর না হবে, সংস্কার দৃশ্যমান না হবে, ততদিন বাংলার জমিনে আগের নিয়মে নির্বাচন হতে পারে না।”

মঙ্গলবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের সামনে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতেয়াজ আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাউয়ুম, সহ-প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক কেএম শরীয়াতুল্লাহসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

চরমোনাই পীর আরও বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনকে সুসংহত করতে হলে সংস্কার জরুরি। জুলাই সনদের দাবিগুলো পূরণ এবং বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।” তিনি সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তারা জুলাই আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধের জন্য ন্যায়বিচার ও সংস্কারের ওপর জোর দেন।