নির্বাচন কমিশনে ২৯ দলের আয়-ব্যয় হিসাব জমা, ১১ দল কিছুই দেয়নি

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৫০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৯টি দল ২০২৪ পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত সময়ে জমা দিয়েছে। এছাড়া ১০টি দল হিসাব জমার জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। তবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বিকল্পধারা বাংলাদেশসহ ১১টি দল হিসাব জমা বা সময় বাড়ানোর আবেদন কোনোটিই করেনি। বৃহস্পতিবার ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন ইসিতে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। বর্তমানে ইসিতে ৫০টি দল নিবন্ধিত রয়েছে। তবে চলতি বছরে নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির এই হিসাব জমার বাধ্যবাধকতা নেই।

সময় বাড়ানোর আবেদনকারী দল

ইসি জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ে হিসাব জমা দিতে না পারায় ১০টি দল সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। দলগুলো হলো:

  • বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)

  • বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

  • বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)

  • বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট

  • জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)

  • বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)

  • বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি

  • লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)

  • বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

  • বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি

এসব দলের আবেদন কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং ইসি তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

হিসাব জমা দেয়নি যেসব দল

১১টি রাজনৈতিক দল নির্ধারিত সময়ে হিসাব জমা দেয়নি এবং সময় বাড়ানোর আবেদনও করেনি। দলগুলো হলো:

  • কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ

  • বিকল্পধারা বাংলাদেশ

  • জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)

  • জাকের পার্টি

  • বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)

  • বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন)

  • গণফ্রন্ট

  • বাংলাদেশ ন্যাপ

  • তৃণমূল বিএনপি

  • বাংলাদেশ জাসদ

  • গণসংহতি আন্দোলন

নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকি

২০০৮ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোনো দল পরপর তিন বছর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে ইসি তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় এক যুগ পর দলটি আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে। অন্যদিকে, নিবন্ধন স্থগিত থাকায় এবার প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ হিসাব জমা দেয়নি।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, হিসাব জমা না দেওয়া দলগুলোর বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কমিশন সভায় আলোচনা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ইসি এই বিধান কঠোরভাবে পালনের ওপর জোর দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষে কলাবাগানে অনুষ্ঠিত ব্যতিক্রমী আয়োজন

আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষে সৃজনশীল পাঠশালা চারুপুথির আয়োজনে রাজধানীর কলাবাগানে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে ছিল ছবি আঁকার পাশাপাশি ইনভেন্টরস পাপেটের আয়োজনে পাপেট শো ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো, শিশুরা ৫ হাজার ফিট লম্বা কাগজের রোলে সুন্দরবন, প্রাণ-প্রকৃতি ও বাঘের ছবি আঁকবে। বছরব্যাপী চলা এই কার্যক্রম শেষ হবে আগামী বছরের আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসে।

ঢাকার আয়োজনের পর এই রোল একটি ক্যারাভ্যান ভ্যানের মাধ্যমে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে পৌঁছাবে। সেখানে কোমলমতি শিশুরা এই বৃহৎ আয়োজনের অংশ হবে। এরপর এই ছবি জমা দেওয়া হবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর জন্য।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমাদের বাস্তুতন্ত্রে প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সুন্দরবনের প্রতিটি গাছ ও প্রাণী বাঁচানো আমাদের সবার দায়িত্ব।” বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াইল্ড টিমের সিইও অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, কাজী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিইও তানভীর হায়দার চৌধুরী এবং কলাবাগান স্পোর্টস ক্লাবের সভাপতি। আয়োজকরা জানান, এই উদ্যোগের মাধ্যমে তারা শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষকে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে চান, যাতে ভবিষ্যৎ পৃথিবী হয় আরও ন্যায্য, নিরাপদ ও টেকসই।

সাদিক কায়েমের ‘হিস্যা’ নিয়ে অভিযোগ, আব্দুল কাদেরের ফেসবুক পোস্টে বিতর্ক

  বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আব্দুল কাদের সাদিক কায়েমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি শুধু অভ্যুত্থানে তাঁদের অবদান ও ত্যাগ অনুযায়ী ‘যথাযথ হিস্যা’ চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে তাঁর ফেসবুক পোস্টে এই মন্তব্য করেন তিনি। তবে, তিনি যে ফেসবুক পেজে পোস্টটি করেছেন, তা ভেরিফায়েড নয়।

আব্দুল কাদের তাঁর পোস্টে লেখেন, অভ্যুত্থানের পর জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের একজন সাবেক সভাপতি এবং এক শিবির নেতার স্ত্রী মূলত ‘হিস্যা’ সংক্রান্ত বিষয়ে লিয়াজোঁ করছিলেন। তাঁরা সচিবালয় থেকে মন্ত্রণালয় ও আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে নিজেদের মতাদর্শী ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য তদবির করেছেন। তিনি জানান, প্রথমে সবকিছু ঠিকঠাক চললেও, পরে সমস্যা শুরু হয় যখন এই দুই ব্যক্তি আসিফ নাজরুল ও নাহিদ ইসলামের নাম ব্যবহার করে তদবির করতে থাকেন, তাঁদের অজান্তেই।

আব্দুল কাদের আরও লেখেন, আসিফ ও নাহিদ এই কার্যক্রমকে সমীচীন মনে করেননি এবং তাঁদের নাম ব্যবহার করে তদবির করাকে সঠিক বলে বিবেচনা করেননি। ফলে, জামায়াত-শিবিরের ওই দুই ব্যক্তির নামে মন্ত্রণালয়গুলোতে চিঠি পাঠানো হয়, যাতে তাঁদের তদবির গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরই সাদিক কায়েম আব্দুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি লেখেন, “সাদিক ভাই এক রাতে আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে চান। সন্ধ্যা থেকে রাত চারটা পর্যন্ত ম্যাসেজ দিয়েছেন। আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে থাকলেও তাঁর পীড়াপীড়িতে রাত চারটায় ভিসি চত্বরে দেখা করি। কথা চলে ফজরের ওয়াক্ত পর্যন্ত। সাদিক ভাইয়ের একটাই অভিযোগ—অভ্যুত্থানে তাঁদের এত অবদান, ত্যাগ, অথচ এখন তাঁদের প্রতি ইনজাস্টিস করা হচ্ছে। মাহফুজ, নাহিদ, আসিফরা তাঁদের কথা শুনছেন না, তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।”

এই পোস্টটি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার ভাগবণ্টন নিয়ে এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। তবে, আব্দুল কাদেরের এই পোস্টে সাদিক কায়েমের অবস্থান এবং জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। সাদিক কায়েম বা তাঁর পক্ষ থেকে এখনো এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

শাহবাগে ‘জুলাই যোদ্ধা’র অবরোধ, নতুন মব তৈরির অভিযোগ রাশেদ খাঁনের

জুলাই সনদ ঘোষণা ও বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে একদল বিক্ষোভকারী। এই অবরোধে অংশ নিয়েছেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা ও আহত ব্যক্তিরা। তবে, এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন শাহবাগে ‘আরেকটি মব’ তৈরির অভিযোগ তুলেছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা ‘অন্তর্বর্তী সরকার, জুলাই সনদ দরকার’ স্লোগান দিয়ে অবরোধ শুরু করেন। এতে শাহবাগসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ১২:২০ নাগাদ শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর জানান, প্রায় ১,৫০০ বিক্ষোভকারী অবরোধে অংশ নিয়েছেন। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সংখ্যা কিছুটা কমলেও তারা অবরোধ অব্যাহত রাখেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে রাশেদ খাঁন বলেন, “যতটুকু তথ্য পেলাম, শাহবাগে আরেকটি মব ত彼此

তৈরি করা হচ্ছে। ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে জড়ো হতে বলা হয়েছে। কারা এই কাজটা করছে, অনুমান করার চেষ্টা করুন।” তিনি আরও বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলমান থাকা সত্ত্বেও এই অবরোধ ডাকা হয়েছে। জুলাই যোদ্ধা কি এই ২০০-১০০ মানুষ? সারা দেশে কোটি কোটি জুলাই যোদ্ধা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের স্টাইলে রাজনীতি বন্ধ করুন। দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে আরেকটি ১/১১ সৃষ্টির অপচেষ্টা দেশবাসী রুখে দেবে, ইনশাআল্লাহ।”

রাশেদ খাঁন সতর্ক করে বলেন, “ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকারের ঘোষিত সময়ে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র চাই। পরিস্থিতি ঘোলাটে করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টার পরিণতি ভালো হবে না। এতে সবচেয়ে বেশি ফায়দা পাবে আওয়ামী লীগ। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য বজায় রাখুন। দেশকে অস্থিতিশীল করার ভারতীয় ফাঁদ থেকে দূরে থাকুন।”

শাহবাগের এই অবরোধ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এটিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের ন্যায্য দাবি হিসেবে দেখলেও, রাশেদ খাঁনের মতো অনেকে এটিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও, এই অবরোধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অস্থির নয়, বরং জনগণের মালিকানা তাদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়াই দলের মূল লক্ষ্য। তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হলে দেশের অনেক সমক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “১২টি মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে একমত হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্যের চেষ্টা চলছে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, তা বাদ দিয়ে শুধু মৌলিক বিষয়গুলো নিয়েই সংস্কার করা উচিত।” তিনি গণতন্ত্রে শৃঙ্খলার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “গণতন্ত্রে কাঁদা ছোড়াছুড়ি হলেও এর একটা সীমা থাকা উচিত। এমনটা না হলে ভবিষ্যতে তিক্ততা তৈরি হবে।”

এ সময় তিনি জুলাই-আগস্টের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এই অভ্যুত্থান আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছে।”

এই আলোচনা সভায় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।

জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বাইপাস সার্জারির জন্য হাসপাতালে ভর্তি

 
 বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান হৃদরোগের কারণে বাইপাস সার্জারির জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

পোস্টে বলা হয়, ডা. শফিকুর রহমানের হাসপাতালে ভর্তির খবর পেয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফোন করে তাঁর শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার সামগ্রিক খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি ডা. শফিকুর রহমানের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। পোস্টে আরও বলা হয়, “মহান আল্লাহ প্রধান উপদেষ্টাকে উত্তম জাযা দান করুন। আমিন।”

গত ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে বক্তৃতার সময় ডা. শফিকুর রহমান দুইবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মঞ্চে ধসে পড়েন। এরপর তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও, ফলোআপ চিকিৎসার অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তাঁর এনজিওগ্রাম করা হয়। পরীক্ষায় তাঁর হৃদপিণ্ডের তিনটি প্রধান রক্তনালিতে উল্লেখযোগ্য ব্লক ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বাইপাস সার্জারির পরামর্শ দিয়েছেন, যদিও অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মতো বিকল্প চিকিৎসার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী নাজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে “তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল” অবস্থায় রয়েছেন। তবে সার্জারির সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তিনি দেশের বাইরে চিকিৎসার প্রস্তাব সত্ত্বেও দেশেই সার্জারি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বলেন, “আমি এদেশেই জন্মগ্রহণ করেছি, এদেশেই চিকিৎসা নিবো এবং এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে আজীবন মিশে থাকতে চাই।”

এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মধ্যে তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সংগঠনের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।

ছাত্রদলের সাবেক নেতা সৌরভ প্রিয় পাল সাময়িক বহিষ্কার, চার নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সৌরভ প্রিয় পালকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ। এছাড়া, তাঁর সঙ্গে সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক চার নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌরভ প্রিয় পালের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সংসদ এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের অনুমোদনক্রমে সৌরভ প্রিয় পালকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের সকল নেতাকর্মীকে তাঁর সঙ্গে কোনোরূপ সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি বাপ্পি দে, বিপ্লব চৌধুরী বিল্লু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত তালুকদার এবং অপু চৌধুরী আকাশের বিরুদ্ধেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। তাঁদেরকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে তাঁদের বিরুদ্ধে স্থায়ী সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

এই ঘটনা নিয়ে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং সংগঠনের নীতি-আদর্শ বজায় রাখার প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। তবে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এটিকে সংগঠনের শুদ্ধি অভিযান হিসেবে দেখলেও, অনেকে এই পদক্ষেপের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

কুষ্টিয়ায় বিএনপির অভিযোগ বাক্সে চাঁদাবাজি ও ক্লাব দখলের অভিযোগ

কুষ্টিয়ায় বিএনপির স্থাপিত অভিযোগ বাক্সে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে চাঁদাবাজি এবং ক্লাব দখলের অভিযোগ জমা পড়েছে। বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে অভিযোগ বাক্স খুলে এসব অভিযোগ পড়ে শোনান জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক আবু মনি জুবায়েদ, সিনিয়র সহসভাপতি লুৎফর রহমান কুমার, কোষাধ্যক্ষ এম লিটন-উজ-জামান, দপ্তর সম্পাদক মোকাদ্দাস হোসেনসহ অন্যান্যরা।

এর আগে, গত ২১ জুলাই কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নিচে ফটকের পাশে দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে জানতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করেছিল জেলা বিএনপি। সেদিন জাকির হোসেন বলেছিলেন, “এই বাক্সে যেকোনো ব্যক্তি নির্ভয়ে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাস, মাদক কারবার বা রাজনীতির নামে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের মতো বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ করা হবে।”

বুধবার বেলা দুইটার দিকে জাকির হোসেন প্রেসক্লাবে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বাক্সটি খোলেন। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু মনি জুবায়েদ প্রথম আলোকে জানান, আট দিন পর জাকির হোসেন নিজে এসে চাবি দিয়ে বাক্স খোলেন। এ সময় চারটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়, যা তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে পড়ে শোনান।

অভিযোগগুলোর মধ্যে দুটিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি দুটির মধ্যে একটি লালন একাডেমির অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অপরটি একটি হত্যা মামলার সাক্ষীদের প্রশাসনের পরিচয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ। বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে জমা পড়া একটি অভিযোগে বলা হয়, কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার এলাকার ট্রাকস্ট্যান্ডে ছয়-সাতজন বিএনপি নেতা প্রতিদিন ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করেন। অভিযোগে কারা কত টাকা আদায় করেন, তা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, গত বছরের ৫ আগস্টের পর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের পরিচয়ে একটি ক্লাব দখল করা হয়েছে, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা কোনো কার্যক্রম চালাতে পারছেন না।

জাকির হোসেন সরকার বলেন, “জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে দুটি রাজনৈতিক দল-সম্পর্কিত। বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, সেগুলো নিয়ে আমরা দুই দিনের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব, ইনশাআল্লাহ। মানুষ অভিযোগ জানাতে শুরু করেছে। আমরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছি, তা গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হবে।”

সরকার পরিচালনায় জনগণের কথা শুনতে হবে: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সরকার পরিচালনা করতে চাইলে অবশ্যই নাগরিকদের কথা শুনতে হবে। তিনি জানান, গত দেড় দশক ধরে জনগণ কয়েকজনের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করেননি বা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হননি। তিনি বলেন, “জনগণ রাষ্ট্র ও সরকারে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই স্বৈরাচারকে হটিয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে।”

বুধবার ঢাকার আশুলিয়ায় বিএনপির ‘নারকীয় জুলাই’ প্রতিবাদ সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে নির্বাচন। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে বারবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেয়। স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত জনগণ যদি ভোটের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রে জনগণের ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।”

তারেক রহমান জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “সবচেয়ে বেশি শ্রমিক মারা গেছে, বিশেষ করে সাভার-আশুলিয়ায় গণহত্যা চালানো হয়েছে। হত্যার পর লাশগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এমন বর্বরতা কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্টদের পলায়নের দিনেও সাভার-আশুলিয়ায় গণহত্যা চলছিল।”

তিনি আরও বলেন, “গত বছর জুলাইয়ের আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষের সরাসরি কোনো স্বার্থ জড়িত ছিল না। তারা সরকারি চাকরির আশা করেননি। তবুও পোশাক কারখানার শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যানচালক, রেস্তোরাঁকর্মী, রিকশাচালকরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। কারণ, ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় থাকলে কেউ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে না, কোনো ন্যায্য দাবি আদায় হবে না।”

তারেক রহমান জোর দিয়ে বলেন, “সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জনগণের মুখাপেক্ষী করতে পারলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন সম্ভব। এর মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা যাবে।”

ফেনীতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জয়ী হবে: আবদুল আউয়াল মিন্টু

 বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, ফেনীর নির্বাচনী ইতিহাস সবাই জানে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি জয়লাভ করবে। তিনি জানান, দলের নেত্রী খালেদা জিয়াও নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং তিনি এখন সুস্থ আছেন। ফেনীতে নির্বাচন নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।

বুধবার দুপুরে ফেনী শহরের একটি কনভেনশন হলে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “লন্ডনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তার আগেও নির্বাচন হতে পারে, হয়তো জানুয়ারিতেও। সুপ্রিম কোর্টে কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে একটি মামলা চলমান রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যদি কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রবর্তন হয়, তাহলে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করবে। কেয়ারটেকার সরকারের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।”

সরকারের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত ১৯ বছর ধরে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি। যারা বলে আমরা হঠাৎ নির্বাচন চাচ্ছি, তা সঠিক নয়। ২০০৬ সাল থেকে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। সরকার যদি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ না থাকে, তাহলে তারা ভালো কাজ করবে না। তাই আমরা চাই নির্বাচন হোক।”

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। ২০০৬ সাল থেকে দেশে কোনো নির্বাচিত সরকার নেই। দুই যুগ ধরে নির্বাচিত সরকার না থাকলে মানুষের অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সরকার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে।”

নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণার জন্য ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে সমাবেশ: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ৩ আগস্ট রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিতে এই দিন শহীদ মিনারে জনসমাবেশের আয়োজন করা হবে।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নরসিংদী পৌরসভা মোড়ে এনসিপির নরসিংদী শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা বাতিলের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন পর্যায়ক্রমে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। তবে, গত এক বছরে নানা ষড়যন্ত্র ও বাধার মুখে সংস্কার কার্যক্রম ও নতুন সংবিধান প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা কিছুই ভুলিনি, কোনো দাবি থেকে সরে আসিনি। আমরা সংগঠিত হচ্ছি এবং জনগণের দাবি আদায় করে ছাড়ব। নরসিংদীতে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশের দাবিতে এখনো আমাদের রাজপথে নামতে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “৩ আগস্ট আমরা শহীদ মিনারে জড়ো হব। নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের মানুষ এলে ঢাকা ভরে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি, নরসিংদীবাসীর সমর্থনে শহীদ মিনার থেকে দাবি আদায় সম্ভব হবে।”

নরসিংদীর উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখানে ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ রয়েছে। আমরা তাদের বিতাড়িত করব।”

সমাবেশের আগে বিকাল সোয়া ৫টায় নরসিংদীর জেলাখানা মোড় থেকে নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশ স্থলে পৌঁছায়।

এর আগে দুপুরে নরসিংদী ক্লাবে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় শহীদ পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দেন তারা। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক সায়োরার তুষার, ইয়াসমিন মিতু, দেলোয়ার আকন্দ সৌরভ, সাইফুল ইসলাম, ইমতিয়াজ জাহান বেলাল, রোবাট হোসেন, আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার শেলীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা: ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে টেলিগ্রামে চাঁদাবাজির অভিযোগ

 ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮-এর একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে টেলিগ্রাম প্ল্যাটফর্মে চাঁদাবাজি, অননুমোদিত গ্রুপ পরিচালনা এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে অর্থ সংগ্রহের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতা হারানোর পরেও এই শীর্ষ নেতা ভার্চুয়াল মাধ্যমে দল পরিচালনা ও অর্থ আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ৫ আগস্ট, যেদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হবে, তার আগেই দলের অভ্যন্তরে তীব্র অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

গত এক বছরে টেলিগ্রাম আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের মূল সাংগঠনিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। কিছু গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা ভার্চুয়াল আড্ডায় কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তবে, নিউজ ১৮-এর প্রতিবেদন অনুসারে, শেখ হাসিনা নিজে যখন কোনো টেলিগ্রাম সেশনে উপস্থিত থাকেন, তখনো কে তার সামনে কথা বলার সুযোগ পাবেন, তা নির্ধারণে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ওবায়দুল কাদের টেলিগ্রামকে তার রাজনৈতিক কার্যক্রমের মূল মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি প্রতিদিন একাধিক গ্রুপে কথা বলার সময়সূচি ঠিক করেন এবং প্রায়ই ‘ঢাকা ঘেরাও’ করার ডাক দেন। তবে তার বক্তব্যে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বা বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দলের একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজ ১৮-কে বলেন, “ওবায়দুল কাদেরকে এখন কর্মীরা প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে টেলিগ্রামে অসংখ্য গ্রুপ তৈরি করেছেন। এগুলো দলের জন্য নয়, বরং অর্থনৈতিক প্রতারণার জন্য। শীর্ষ নেতৃত্ব জানতে পেরেছে, তিনি দলের সিনিয়র নেতা, সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, যাতে তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিতে পারেন।”

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় দলটি ইতোমধ্যে জটিল সমস্যার মুখোমুখি। টেলিগ্রামে অননুমোদিত গ্রুপ গজিয়ে ওঠা এবং এসব গ্রুপে গোয়েন্দা সংস্থার অনুপ্রবেশের ঘটনায় দলের শীর্ষ মহল বিস্মিত। এই পরিস্থিতি দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলেছে।

শহীদ মিনারে সমাবেশ নিয়ে ছাত্রদল-এনসিপির দ্বন্দ্ব

 
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। একই দিনে একই স্থানে সমাবেশ করতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাত্রদল ইতোমধ্যে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে, কিন্তু এনসিপি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। এই পরিস্থিতি নিয়ে দুই সংগঠনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

গত ৩০ জুন রাতে ছাত্রদল জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান স্মরণ, শহীদ ও আহতদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষণ, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপনের জন্য ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর অংশ হিসেবে তারা ২২ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে শহীদ মিনারে সমাবেশের অনুমতি নেয়।

অন্যদিকে, গত ২৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা করেন, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে তারা জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ করবে। তিনি বলেন, সরকার যদি ৩ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশে ব্যর্থ হয়, তাহলে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে তারা আবার আন্দোলনে নামবে। তবে, এনসিপি এখনো শহীদ মিনারে সমাবেশের চূড়ান্ত অনুমতি পায়নি।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, “আমরা আগেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছি এবং অনুমতি নিয়েছি। এনসিপির পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে আমাদের একটি মিটিং রয়েছে। সমাবেশের জন্য জায়গা ছাড়া হবে কিনা, তা বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে।”

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, “জায়গা ম্যানেজ হয়েছে কিনা, আমি এখনো জানি না। আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে সম্ভবত বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে। চূড়ান্ত হলে জানাতে পারব। আমরা শহীদ মিনারে সমাবেশ করব, যেখানে ৬৪ জেলা থেকে লোক আসবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, “ছাত্রদল আগে আবেদন করায় তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে একই স্থানে দুটি সংগঠনকে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। আমি নাহিদ এবং হাসনাতকে জানিয়েছি, তারা ছাত্রদলের সভাপতির সঙ্গে কথা বলবেন। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করতে পারলে ভালো।”

বিষয়টি নিয়ে দুই সংগঠনের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা চলছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে সরে দাঁড়ালেন নীলা ইস্রাফিল, দলের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন

 
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন নীলা ইস্রাফিল। সোমবার (২৮ জুলাই ২০২৫) তিনি এ ঘোষণা দেন। এরপর দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “নীলা ইস্রাফিল এনসিপির কেউ নয়। তবে তিনি নাগরিক কমিটিতে ছিলেন।” এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নীলা ইস্রাফিল দলের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন এবং দলীয় নৈতিকতা ও আচরণ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

নীলা ইস্রাফিল সোমবার রাতে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, “আজ যখন আপনাদের নেতার অপরাধ, অনাচার এবং লিপ্সার বিরুদ্ধে আমি মুখ খুলেছি, তখন আমি আপনাদের কেউ না? এত দিন আমার কণ্ঠ, আমার পরিচয়, আমার ত্যাগ আপনাদের পক্ষে ছিল তখন তো কোনো সমস্যা ছিল না! আপনারা কি দল করেন, নাকি কেবল ক্ষমতা আর নারীকে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলার একটা কারখানা চালান?”
তিনি আরও বলেন, “আপনাদের অপরাধ ঢাকার জন্য আজ আমাকেই অস্বীকার করছেন? সত্য বললেই কি নারীকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়? এটাই কি আপনাদের নৈতিকতা? এই প্রশ্ন আজ শুধু আমার না, এই প্রশ্ন প্রতিটি নারীর, যাকে আপনারা দলীয় পরিচয়ে ব্যবহার করেছেন, আর পরে ‘অপরিচিত’ বানিয়েছেন।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আপনারা কি আমাকে সত্যিই কখনো অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, নাকি কেবল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতেন?”

নীলা ইস্রাফিল আরও উল্লেখ করেন, “আমার কণ্ঠ যখন আপনাদের পক্ষে ছিল, তখন তো ‘আমাদের নেত্রী’, ‘আমাদের শক্তি’ বলে গলা ফাটাতেন। এখন যখন আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছি, তখন ‘সে তো আমাদের কেউ না’? এটা কি কোনো রাজনৈতিক দলের মূল্যবোধ? নাকি এটি প্রমাণ করে, দল নয়, আপনারা ব্যক্তি রক্ষায় ব্যস্ত? জনগণ দেখছে, বুঝছে এবং প্রশ্ন করছে এই দল কি আদৌ জনগণের ন্যায় ও নৈতিকতার প্রতিনিধিত্ব করে?”

তিনি বলেন, “আমি অবাক হই না যে আজ জাতীয় নাগরিক পার্টি আমাকে অস্বীকার করছে। কারণ সত্য বললেই অনেক সময় আপনজনই মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু আমি একটিই প্রশ্ন করতে চাই—যদি আমি আপনাদের কেউ না হয়ে থাকি, তাহলে আমার কণ্ঠ, আমার পরিচয়, আমার মাঠের উপস্থিতি এতদিন আপনারা কেন ব্যবহার করেছেন? একজন নারী যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখনই তাকে দলহীন, আশ্রয়হীন প্রমাণ করতে পারাটাই কি রাজনীতির নতুন রীতি? আমি কারো পরিচয়ে নই, আমি আমার ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো একজন মানুষ। আমাকে অস্বীকার করে সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না।”

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত, পাঁচ নেতা বহিষ্কার

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই ২০২৫) দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিগগিরই নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে।

এদিকে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও এর অধীনস্থ ইউনিটের পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন—চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারৈয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল ইসলাম মিয়াজী, যুবদল নেতা সিরাজুল ইসলাম এবং কামাল উদ্দিন। বহিষ্কৃত এই নেতাদের দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, গত ১২ জুলাই ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হানাহানি ও সহিংসতার ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আরও দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হলেন—বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ড. টি এম মাহবুবুর রহমান। তাদেরও দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের ভেতরে সংঘাত ও হানাহানি সৃষ্টি করে চরমভাবে শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের অভিযোগে এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব হস্তান্তর নিশ্চিত, নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দায়িত্ব হস্তান্তর হবে। সোমবার (২৮ জুলাই) রাতে তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, “একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই দায়িত্ব হস্তান্তর হবে। ক্ষমতায় যেই আসুক। অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলের ফন্দি-ফিকির ৫ আগস্টের মতোই প্রতিরোধের মুখে পড়বে।”

এদিকে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৬০ হাজার সেনা সদস্য মাঠে থাকবেন। এছাড়া, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনবিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গুজব ও ভুয়া তথ্য রোধে ‘ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে কাজ চলছে এবং প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসএম কামরুল হাসান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এসব তথ্য জানান।

এর আগে, সোমবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষা করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। তাদের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক, কাউন্টার টেরোরিজম, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের বিষয় উঠে আসে। এ সময় ড. ইউনূস মার্কিন প্রতিনিধিকে জানান, তার সরকার সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে।

এনসিপির নামে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি: ময়মনসিংহে জুলাই পদযাত্রায় হাসনাত আবদুল্লাহ

 জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘চাঁদাবাজের অভয়াশ্রম এনসিপি হবে না।’ সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ ও পথসভায় বৃষ্টির মধ্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। নগরের টাউন হল মাঠে আয়োজিত এই সভায় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক বিষয়, আমাদের নাম–পরিচয় ব্যবহার করে, এনসিপির ব্যানার ব্যবহার করে অনেকে চাঁদাবাজিতে যুক্ত হচ্ছেন। আমরা মুখে মুখে বলব, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, কিন্তু আপনি গিয়ে করবেন চাঁদাবাজি—এই জিনিসগুলো কিন্তু আমরা বরদাশত করব না। আমাদের লাখ লাখ কর্মী বা নেতার দরকার নেই। এই চাঁদাবাজের অভয়াশ্রম এনসিপি হবে না।’

নিজের ঘরে শুদ্ধি অভিযানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আরেক ধরনের নেতা–কর্মী রয়েছে, যারা তেলবাজ ও সেলফিবাজ। এদের কোনো প্রোগ্রামে ডাকলে পাওয়া যায় না। কাজে ডাকলে পাওয়া যায় না। নেতার পেছনে ঘোরে, সেলফি তুলে ফেসবুকে সেলফি–বাণিজ্য করে। প্রশাসনে ছবি–বাণিজ্য করে। এদের প্রতিহত করতে হবে। আগে নিজের ঘর ঠিক করতে হবে। আমার দরকার নেই এসব সেলফিবাজ, তেলবাজ।’

সভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দেশে সংস্কারপ্রক্রিয়া চলছে। ঐকমত্য কমিশন বলেছে, জুলাই সনদ হবে। আমরাও বলেছি, জুলাই সনদ হতেই হবে এবং সেটা ৫ আগস্টের মধ্যে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঐকমত্য চাই। নির্বাচন কমিশন, দুদক এবং পিএসসির নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিটি তৈরি করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, নিরপেক্ষ প্রশাসন, নিরপেক্ষ পুলিশ, নিরপেক্ষ আদালত। এই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো আমাদের প্রয়োজন। ইনশা আল্লাহ আমরা ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জুলাই পদযাত্রায় নেমেছি কারণ আমরা আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ এখনো পাইনি। তবে ময়মনসিংহবাসী আমাদের পাশে থাকলে অচিরেই সেই দেশ বিনির্মাণ করতে পারব। ৩ আগস্ট আমরা ঢাকায় জড়ো হচ্ছি, ময়মনসিংহবাসীকে আগাম দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছি।’ ময়মনসিংহের অবকাঠামোগত সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদকে মেরে ফেলা হয়েছে। বিগত সরকার শুধু মানুষ বা গণতন্ত্র হত্যা করেনি, প্রাণপ্রকৃতি, নদীগুলোকেও হত্যা করেছে। আমরা সেই নদীগুলো উদ্ধার করতে চাই। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ও সুষম বণ্টন চাই।’

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনারা (বিএনপি) আজকে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেছেন। ফিরে এসেছেন, স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু শহীদদের রক্তের সঙ্গে ওয়াকআউট করতে পারেন না। যখন খুনি হাসিনা আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, আমরা কী গুলির মুখ থেকে ওয়াকআউট করেছিলাম? শহীদদের রক্ত ও আহতদের অঙ্গহানির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করছি।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, ময়মনসিংহে শহীদ সাগরের বাবা মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।

খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আবেদন: বিএনপির চিঠি

 বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিতসার জন্য পুনরায় যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সহযোগিতা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি ‘অতি জরুরি’ চিঠি পাঠিয়েছে দলটি। রোববার (২৭ জুলাই) খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারের স্বাক্ষরে চিঠিটি পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের দপ্তরে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, চিকিতসক দলের পরামর্শ অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিতসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে তাঁর এবং তাঁর চারজন সফরসঙ্গীর জন্য নোট ভারবাল ইস্যু করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চিঠিতে উল্লিখিত সফরসঙ্গীদের নাম হলো:
১. বেগম খালেদা জিয়া
২. এ বি এম আবদুস সাত্তার (একান্ত সচিব)
৩. মো. মাসুদার রহমান
৪. ফাতেমা বেগম
৫. রুপা সিকদার

এ বিষয়ে এ বি এম আবদুস সাত্তার বলেন, “খালেদা জিয়ার লন্ডনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই নতুন করে ১০ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবে চিকিতসার জন্য ম্যাডামের লন্ডন যাওয়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি।”

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিতসা শেষ করে খালেদা জিয়া দেশে ফিরেছিলেন।

চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে: ডা. তাসনিম জারা

 জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, শুধু চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের ধরলেই হবে না, তাদের পৃষ্ঠপোষকদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। সোমবার (২৮ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এই দাবি জানান।

তিনি লিখেছেন, “শুধু চাঁদাবাজ আর দুর্নীতিবাজদের ধরলেই হবে না, তাদেরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে চাঁদাবাজি কখনোই বন্ধ হবে না।”

গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ লক্ষ্য করেছেন বলে জানান ডা. জারা। তিনি বলেন, “রাজবাড়ী থেকে খুলনা, পঞ্চগড় থেকে ভোলা—যেখানেই গেছি, সাধারণ মানুষ বারবার একটি প্রশ্ন তুলেছেন, এই দুর্নীতি আর চাঁদাবাজির রাজত্ব কবে শেষ হবে?”

এনসিপি নেত্রী আরও বলেন, “অপরাধী যেই হোক, তার পরিচয়, প্রভাব বা অতীত ইতিহাস যাই থাকুক, সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।” তিনি মনে করেন, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুধু ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সংস্কারের লড়াই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মগুলোকেই আগে নিজেদের ঘর গোছাতে হবে।

সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ডা. জারা লিখেছেন, “এই সরকার দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর ও কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি। শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেনি, সেই বাস্তবতা ছিল। কিন্তু এক বছর পরেও যদি আপনি সেটা করতে না পারেন, সেটার দায় আপনার।”

তবে তিনি আশাবাদী যে, এখনো সময় আছে। তিনি বলেন, “এই সরকার যদি সাহসী পদক্ষেপ নেয়, রাজনৈতিক প্রভাবশালী হোক বা প্রশাসনিক ক্ষমতাবান, সবাইকে যদি জবাবদিহির আওতায় আনে, তাহলে মানুষ এই সরকারকে শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করবে।”

জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলা: আমির হোসেন আমু ও আবদুস সোবহান গোলাপকে গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ

 জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার মিরপুরে প্রকৌশলী সুজন মাহমুদ হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত। এছাড়া ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সিদ্দিকি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

সোমবার (২৮ জুলাই) শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মাসুম মিয়া এই আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমন্বয়কদের চেয়ে সাধারণ মানুষের ভূমিকা বেশি: উমামা ফাতেমা

 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেছেন, আন্দোলনের সময় সমন্বয়কদের তুলনায় সাধারণ মানুষ অনেক বেশি সহায়তা করেছে। গতকাল মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক লাইভ ভিডিও বার্তায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

উমামা বলেন, “সমন্বয়ক টার্মটা আন্দোলনের সময় কিছুটা দরকার ছিল—যেমন, আমি যদি বিপদে পড়ি তাহলে যেন কাউকে ফোন করে কানেক্ট করতে পারি। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। ৫ আগস্ট পর্যন্ত সমন্বয়ক লিস্টে থাকা বেশিরভাগ মানুষকেই আমি রিচ করতে পারিনি।”

তিনি জানান, আন্দোলনের সময় ৫২, ৬২ ও পরে ১৫৮ জন সমন্বয়কের তালিকা তৈরি হলেও তাদের অনেকেই দায়িত্ব পালন করেননি। বরং সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নেমে আন্দোলনের গতি বজায় রেখেছে। উমামা বলেন, “জুলাই-আগস্টের সময় মনে আছে, অভ্যুত্থান এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল যে বোঝা যাচ্ছিল না কে কোন দিক থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পেরেছে, কানেক্ট করেছে। অথচ যাদের আমরা সমন্বয়ক ভাবছিলাম, তাদের অনেকেই সেই ভূমিকা পালন করতে পারেনি।”

উমামা আরও উল্লেখ করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন দখল ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেন, “সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দখল করছে, কেউ কেউ চাঁদাবাজিতেও জড়িয়েছে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনের মধ্যে একটি ‘সমন্বয়ক বাহিনী’ গড়ে উঠছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “সেখানে আওয়ামী লীগের রক্ষীবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় দখল নিতে থাকে। এখন মনে হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই সমন্বয়ক বাহিনী গড়ে উঠছে।”

লাইভে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “গতকাল পর্যন্ত কেউই সমন্বয়ক পরিচয় নিতে চাইছিল না, আর আজ দেখি সবাই সমন্বয়ক। এটা প্রশ্ন তো তুলেই।”

তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার চেষ্টা: মির্জা ফখরুল

 বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে যুবদলের গ্রাফিতি আর্টসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “জুলাই আন্দোলনে গোটা বাংলাদেশ নেমে এসেছিল। যুবদলের ৭৯ জন এবং ছাত্রদলের ১৪২ জন শহীদ হয়েছেন। যার যা অবদান, তা তাকে দিতে হবে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে।” তিনি জানান, কোনো একক দল বা ছাত্র সংগঠন নয়, বরং শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল, যার ফলে স্বৈরাচারের বিদায় সম্ভব হয়েছে।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের চাঁদাবাজির মতো ঘটনা কি আমরা চেয়েছিলাম? এত তাড়াতাড়ি এসব ঘটলে ভবিষ্যত কী হবে? গোটা বাংলাদেশ তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জোর গলায় বলতে পারছি না যে এ দেশ নতুন করে গড়ে উঠবে। বর্তমানে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, যা ফ্যাসিস্টদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।”

বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন তুলে বলেন, “শেখ হাসিনার বিচারের কোনো অগ্রগতি দেখলাম না, এক বছর পেরিয়ে গেল। যারা প্রকাশ্যে হত্যা করেছে, তাদের কেন গ্রেফতার করা হলো না?” সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিএনপি সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। তিনি আরও বলেন, “যতই চাপ তৈরি করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হোক, দেশের মানুষ লড়াই করতে জানে। তারা লড়াই করে দেশকে মুক্ত করেছে। তারেক রহমান চেষ্টা করছেন, কীভাবে বাংলাদেশকে আবার গড়ে তোলা যায়।”

জুলাই সনদে ঐকমত্য না হলে স্বাক্ষর নিয়ে সন্দেহ: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

 জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে না পৌঁছালে জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে কি না, তা নিয়ে তাঁদের সন্দেহ রয়েছে। আজ সোমবার সকালে জামালপুরের সার্কিট হাউসে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে উচ্চকক্ষ। আমরা বলেছিলাম, উচ্চকক্ষটি ভোটার অনুপাতে, পিআর পদ্ধতি অনুসারে হতে হবে। এটি ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে এখনো ঐকমত্য আসেনি। ঐকমত্য ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে কি না, তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। ঐকমত্যের পরই আমরা সনদের বিষয়টি বিবেচনা করব। তবে আমরা চাই, ৫ আগস্টের মধ্যে সর্বদলীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়।”

প্রশাসন ও পুলিশের নিরপেক্ষ আচরণ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, “জুলাই সনদ হওয়ার পর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। নির্বাচনের আগে অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।”

আজ দুপুরে জামালপুরে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। শহরের তমালতলা থেকে শুরু হয়ে পদযাত্রাটি ফৌজদারি এলাকার পথসভাস্থলে গিয়ে শেষ হবে। জামালপুরের কর্মসূচি শেষে দলের নেতারা ময়মনসিংহে যাবেন।

গত রোববার শেরপুরে পদযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জামালপুরে পৌঁছান। রাত আটটার দিকে তাঁরা জামালপুর শহরের চামড়াগুদাম এলাকায় আল জামিয়াতুল হাবিবিয়া কওমি মাদ্রাসা, হজরত শাহ জামাল (র.)-এর মাজার ও দয়াময়ী মন্দির পরিদর্শন করেন। এরপর তাঁরা সার্কিট হাউস ও বিভিন্ন হোটেলে রাত্রিযাপন করেন।

পথসভায় সভাপতিত্ব করবেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব ও জামালপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী লুতফর রহমান। সভায় নাহিদ ইসলাম ছাড়াও বক্তব্য দেবেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, নাহিদা সরওয়ার, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র মুখ্য সমন্বয়কারী আবদুল হান্নান, যুগ্ম সদস্যসচিব লুতফর রহমান, সদস্য মশিউর আমিন, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক হিফজুর রহমান এবং সংগঠক মোসাদ্দেকুর রহমান।

গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার প্রস্তুতি অন্তর্বর্তী সরকারের

 আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে, গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির সময়ে, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এই ঘোষণা দিতে পারেন বলে সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে। এ–সংক্রান্ত বার্তা আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই ইসির কাছে পৌঁছানো হবে।

এদিকে, ৫ আগস্টের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে জুলাই সনদের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। গত রোববার সকালে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনার শুরুতে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সোমবারের মধ্যে জুলাই সনদের খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, “বড় ধরনের মৌলিক আপত্তি না উঠলে খসড়া নিয়ে আলোচনা করা হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সন্নিবেশিত করে প্রাথমিক সনদে ভূমিকা, পটভূমি এবং অঙ্গীকারের বিষয়গুলো থাকবে।”

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আলোচনা

১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজান শুরুর আগে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হতে পারে, যদি সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জিত হয়। তবে এই ঘোষণার পর নির্বাচনের দৃশ্যমান ততপরতা না থাকায় এবং ইসির কাছে স্পষ্ট বার্তা না পৌঁছানোয় বিএনপির মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়। কিছু দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবিও সন্দেহ বাড়িয়েছে।

২২ জুলাই থেকে তিন দফায় বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। ২৬ জুলাই ১৪টি দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা ও তারিখ ঘোষণা করবেন। এটাই আলোচনার সবচেয়ে ফলপ্রসূ ফলাফল। দেশের অরাজকতার একমাত্র সমাধান নির্বাচন।”

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

বিএনপি নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা দুই–চার দিনের মধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করলে আমরা খুশি হব। এটাই আমাদের দাবি।”

তবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলেও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা অপরিপক্ব হবে। সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নির্বাচনের পূর্বশর্ত। জুলাই সনদ ঘোষণার আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা জুলাইয়ের চেতনাকে অবজ্ঞা করা।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ চূড়ান্ত হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় তাঁদের আপত্তি নেই।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা রয়েছে যে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত না হওয়ার জন্য সরকার দলগুলোকে নির্বাচনের বিষয়ে আশ্বস্ত করতে চায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটি স্থগিত: চাঁদাবাজির অভিযোগে রিয়াদসহ চারজনের রিমান্ডের আবেদন

কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাংলাদেশের সকল কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার (২৭ জুলাই) বিকালে রাজধানীর শাহবাগ জাদুঘরের সামনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ও সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ এ ঘোষণা দেন।

রিফাত রশিদ বলেন, “অর্গানোগ্রামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারা দেশের সকল কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। বৈষম্যবিরোধী ব্যানারকে কলুষিত করার জন্য পরাজিত শক্তিরা নানাভাবে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। যারা অনৈতিক কাজে জড়িত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

এ ঘোষণার পেছনে রয়েছে সংগঠনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদের বিরুদ্ধে উঠা চাঁদাবাজির অভিযোগ। রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে রিয়াদসহ কয়েকজন ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রিয়াদসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং পুলিশ তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান রোববার এই রিমান্ডের আবেদন করেন। এ বিষয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রিমান্ডের আবেদন করা অন্য আসামিরা হলেন—সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, এবং মো. ইব্রাহিম হোসেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা বাদী সিদ্দিক আবু জাফরকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে গ্রেফতারের হুমকি দেন। চাপের মুখে সিদ্দিক আবু জাফর নিজের কাছে থাকা ৫ লাখ টাকা এবং ভাইয়ের কাছ থেকে আরও ৫ লাখ টাকা দেন। এরপর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু আবারও বাদীর বাসায় গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজায় জোরে ধাক্কা দেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে জানালে আসামিরা পালিয়ে যান।

গত ২৬ জুলাই রাত ৮টার দিকে রিয়াদসহ পাঁচজন পুনরায় শাম্মী আহমেদের বাসায় স্বর্ণালঙ্কার ও বাকি ৪০ লাখ টাকা দাবি করতে গেলে বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দেন। গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন এবং একজন শিশু আসামি মো. আমিনুল ইসলামকে হাতেনাতে আটক করে। তবে কাজী গৌরব অপু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

এ ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আটক পাঁচজনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে।

রিফাত রশিদ আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগামীতে কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

শেরপুরে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ: শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শেরপুরে আয়োজিত এক জনসমাবেশে ভারত সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, “পুশইন করতে হলে শেখ হাসিনাকে এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের পুশইন করুন। আমরা বিচারের মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাব।” তিনি আরও বলেন, “প্রশাসনের মধ্যে যারা এখনো আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে এবং তাদের সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদেরও বিচার করতে হবে।”

রবিবার (২৭ জুলাই) বিকালে শেরপুর শহরের থানা মোড় এলাকায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির সমাপ্তিতে এনসিপির আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম এই মন্তব্য করেন। এর আগে, শহরের শহীদ মাহবুব চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে থানা মোড়ে এসে শেষ হয়।

উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সমাবেশে বলেন, “আগামীর বাংলাদেশের জন্য আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, গত এক বছরে তা পূরণ হয়নি। এজন্য দেশ গড়তে আমাদের জুলাই পদযাত্রা শুরু করতে হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আর বাংলাদেশে কাউকে পির মানব না। কেউ ৯৫টি কাজ ভালো করলে তাকে ভালো বলব, আর পাঁচটি কাজ খারাপ করলে তাকে খারাপ বলব।”

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন সমাবেশে বলেন, “মাইলস্টোনের ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, কোন করপোরেট সংগঠন বা বাহিনী এর সঙ্গে যুক্ত, আমরা তা জানতে চাই।”

সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আকতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক সারজিস আলম, প্রধান সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও নাহিদা সারওয়ার নিভা।
নেতারা সমাবেশে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ভবিষ্যৎ আন্দোলনের রূপরেখা এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন। এনসিপির এই কর্মসূচি ও নেতাদের আগমনকে কেন্দ্র করে জেলা এনসিপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। সমাবেশকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

নির্বাচনকে ভয় পেলে রাজনীতির দরকার নেই: আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী

 বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যারা নির্বাচনকে ভয় পায়, তাদের রাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি মনে করেন, এ ধরনের দল বা ব্যক্তিরা প্রেসার গ্রুপ বা এনজিও হিসেবে কাজ করতে পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার কোনো অধিকার তাদের নেই।

রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে জুলাই বিপ্লবের এক বছর উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আমির খসরু বলেন, “যেসব দেশে বিপ্লবের পর নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা হয়েছে, সেসব দেশে বিভাজন, গৃহযুদ্ধ এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে, যেসব দেশ দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে গেছে, তারা আর্থিক, সামাজিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে উন্নতি করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিভিন্ন দল, সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না। জাতীয় বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, কিন্তু রাজনৈতিক আদর্শ, চিন্তা ও দর্শন আলাদা হবে। এই ভিন্নতা না থাকলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমরা একদলীয় শাসন বা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চাই না।”

বিএনপির এই নেতা জোর দিয়ে বলেন, “ভিন্নমত থাকতে পারে, তবে একে অপরের প্রতি সহনশীলতা ও শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে। সাংঘর্ষিক রাজনীতির পথে যাওয়া যাবে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের মনস্তত্ত্বে পরিবর্তন এসেছে। যেসব দল বা ব্যক্তি এই পরিবর্তন বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নেই। পরিবর্তনের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।”

এই আলোচনা সভায় জুলাই বিপ্লবের তাতপর্য ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তার দলের অঙ্গীকার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

গৌরনদীতে বিএনপির প্রস্তুতি সভায় সংঘর্ষ, পাঁচজন আহত

 বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির প্রস্তুতি সভাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৭ জুলাই ২০২৫) দুপুর ১টার দিকে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের অডিটোরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু অভিযোগ করেন, আগামী ৫ আগস্টের কর্মসূচি সামনে রেখে রবিবার সকালে অডিটোরিয়ামে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি বলেন, “সভায় উপস্থিত হলে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান এবং তার আত্মীয় নেতারা আমার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। আমার কর্মীরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। আমি সবাইকে শান্ত থাকতে বললেও হান্নান শরীফের অনুসারীরা অতর্কিতে আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।”

মিন্টু আরও জানান, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি রমজান হোসেনকে একা পেয়ে মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান বলেন, “সভা শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল। এ সময় একদল দুর্বৃত্ত ভেতরে ঢুকে আমাদের দুজন কর্মীকে মারধর করে।”

ছাত্রদল নেতা জসিম শরীফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। বর্তমানে এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে।”

জাতীয় সংস্কার জোটের ঘোষণা: ১৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য

 জাতীয় সংস্কার জোটের নেতারা ঘোষণা করেছেন, তারা দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চান। এ লক্ষ্যে তাদের ঘোষিত ১৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন তারা। শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর বিজয় সরণিতে জোটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

সভায় বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদসহ ৩৫টি দল নিয়ে গঠিত জাতীয় সংস্কার জোটে নতুন করে আরও পাঁচটি দল ও একটি জোট যোগদান করে। এর মধ্যে ড. আসলাম আল মেহেদীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি এবং সরদার আব্দুস সাত্তারের গণঅধিকার পার্টি উল্লেখযোগ্য।

জোটের আহ্বায়ক মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী বলেন, “দেশ এখন নানা দিক থেকে ভীষণ সংকটের মুখে। বড় দলগুলো নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। সরকার বিব্রত বোধ করছেন। কিছু উপদেষ্টার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। জুলাই বিপ্লবের স্প্রিট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে। সরকার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, তাদের কিছুই করার নেই। এটা হতে দেওয়া যায় না। আমরা দেশবাসীকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”

জোটের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন, “আমাদের ৮ দফা দাবি নিয়ে সরকার তামাশা করছে। দাবি আদায়ে আগামী ১০ আগস্ট থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এই সরকার আমাদের অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। আমরা এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।”

জোটের ঘোষিত ১৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, পূর্ণাঙ্গ সংস্কার, সকল গণহত্যার বিচার, প্রথমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সহজিকরণ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বাধা দূরীকরণ, ডিসি-ইউএনওর পরিবর্তে স্বাধীন ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গঠন, প্রবাসীদের ভোটার করা, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং নারীর নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা।

সভায় আরও বক্তব্য দেন জোটের প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর এ আর খান, নির্বাহী সমন্বয়ক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ নূরসহ অন্যান্য নেতারা। এই সভার মাধ্যমে জোট তাদের আগামী নির্বাচনের রূপরেখা এবং সংস্কারের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরে।

বিএনপির ২০২৪ সালের আয় ১৫.৬৫ কোটি, ব্যয় ৪.৮০ কোটি: নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন জমা

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) ২০২৪ সালের (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর) আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দলটির আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪২ টাকা, আর ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ৮২০ টাকা। এর ফলে দলটির ব্যাংকে জমা রয়েছে ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

রোববার (২৭ জুলাই) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইসি সচিব আখতার আহমেদের কাছে এই আর্থিক বিবরণী জমা দেন। রিজভী জানান, গত বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে দলটির আয় বেড়েছে ১৪ কোটি ৫৫ লাখ ১৪ হাজার ৬৯১ টাকা। ২০২৩ সালে বিএনপির আয় ছিল ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ১৫১ টাকা এবং ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৭০ টাকা। তুলনায়, ২০২২ সালে দলটির আয় ছিল ৫ কোটি ৯২ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ টাকা এবং ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮০৩ টাকা।

আয়ের উতস প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, “সদস্যদের মাসিক চাঁদা, বই-পুস্তক বিক্রয়, ব্যাংক সুদ এবং এককালীন অনুদান থেকে এই আয় হয়েছে।” ব্যয়ের খাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যক্তিগত সহযোগিতা, দুর্যোগকালীন সহযোগিতা, কর্মসূচি বাস্তবায়ন, এবং লিফলেট ও পোস্টার ছাপানো।

নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে রিজভী সমালোচনা করে বলেন, “পূর্বে নির্বাচন কমিশন প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা হারিয়েছিল এবং নির্বাহী বিভাগের অধীনে ফ্যাসিবাদের অস্ত্র হয়ে উঠেছিল। দিনের ভোট রাতে করা হতো, এবং লুটের নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। মেরুদণ্ডহীন ও চাকরিলোভী লোক দিয়ে ইসি গঠন করা হয়েছিল।” তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান কমিশন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে।

প্রতিনিধি দলের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসিরুদ্দিন আসিম, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সহ-দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন এবং আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।

নির্বাচন কমিশনের রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার (আরপিও) অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে তাদের আগের বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। টানা তিন বছর রিপোর্ট জমা না দিলে দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে।

গুলশানে শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচজন আটক, তিনজন বৈষম্যবিরোধী নেতা বহিষ্কার

 রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে তিনজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এই তিনজনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃত নেতারা হলেন—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাপরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।”

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন এবং সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনোরকম সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন—মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. আমিনুল ইসলাম, ইব্রাহিম হোসেন মুন্না ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান এই আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, আটককৃতরা সমন্বয়ক পরিচয়ে শাম্মী আহমেদের স্বামীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। এর আগে তারা একই বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে গিয়েছিল। শনিবার রাতে তারা স্বর্ণালঙ্কার ও বাকি টাকা আনতে গেলে বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দেয়, এবং পুলিশ তাদের হাতেনাতে আটক করে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি ফ্রান্স, জার্মানি ও ফিনল্যান্ডে কমিটি ঘোষণা করেছে

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ফ্রান্স, জার্মানি ও ফিনল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করেছে। শনিবার (২৬ জুলাই) দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

জার্মানিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে গঠিত ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সাখাওয়াত হোসাইন তুরাগকে আহ্বায়ক এবং তামান্না ইয়াসমিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ফ্রান্সে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে চৌধুরী মোহাম্মদ ইফতেশামকে আহ্বায়ক এবং মু. শাহপরান আহম্মেদ শাকিলকে সদস্য সচিব নির্বাচিত করা হয়েছে। এছাড়া, ফিনল্যান্ডে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে মো. আহাদ শিকদার আহ্বায়ক এবং আলমগীর হোসেন সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক এবং আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ছাত্র-নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল। দলটি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও এখনো নিবন্ধন পায়নি।

এনসিপির এই উদ্যোগ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও সংগঠনকে আরও জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জামায়াতের সমাবেশে খরচ সাড়ে ৩ কোটি টাকা, দাবি ডা. শফিকুর রহমান

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জাতীয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রচারণা ও আয়োজনের পর অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, এত বড় সমাবেশের পেছনে কত টাকা খরচ হয়েছে? সমাবেশে ব্যবহৃত হাজার হাজার বাস, লঞ্চ, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাড়া এবং ঢাকা শহর ব্যানার-ফেস্টুনে সজ্জিত করার কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে দাবি করেছেন, এই সমাবেশে খরচ হয়েছে ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা। তবে এই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতের রোকন সম্মেলনে দেওয়া এক ভিডিও বক্তৃতায় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “ঢাকায় এত বড় একটা সমাবেশ হয়ে গেল, আমরা কি কাউকে চাঁদা তুলতে বলেছি? বলিনি। আমরা নিজেরাও কারও কাছে চাঁদা চাইনি।” তিনি আরও বলেন, “এখন কেউ কেউ বিশ্লেষণ করছেন। সমাবেশে নাকি ১০০, কেউ বলেন ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আপনারা শুনবেন কত খরচ হয়েছে। অবশ্যই রোকন হিসেবে আপনাদের জানার অধিকার রয়েছে। আমার ধারণা ছিল, পৌনে ৩ কোটিতে আটকায়ে ফেলতে পারব। একটু এদিক-সেদিক হবে, এটি সাড়ে ৩ কোটি পর্যন্ত পৌঁছাবে, এর বেশি নয়, আলহামদুলিল্লাহ। এখন যার যে বিশ্লেষণ করার করবে।”

ডা. শফিকুর রহমান সমাবেশের খরচ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১০০-২০০ কোটি টাকার দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, সমাবেশের আয়োজন সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে এবং কোনো চাঁদাবাজি ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জামায়াতের কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাস করেনি, করবেও না। জামায়াত দল নিয়ন্ত্রণ করেছে, দেশও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যারা দলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সার্বিক পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।”

সমাবেশে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ২০২৪ সালের গণহত্যার বিচার, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন, এবং প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। সমাবেশে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতের এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে দিনভর স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে দলটির দাবি, ২০ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় সমাবেশটি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

এই সমাবেশ ও এর খরচ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলমান আলোচনা-সমালোচনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। জামায়াতের আমিরের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, দলটি তাদের আর্থিক স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক অবস্থানকে জনগণের সামনে তুলে ধরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আল-জাজিরার তথ্যচিত্রে সাদিক কায়েমের সাক্ষাতকার নিয়ে সমালোচনার ঝড়

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা সম্প্রতি ‘জুলাইয়ের ৩৬ দিন: উন্মোচিত হচ্ছে শেখ হাসিনার গোপন আদেশনামা’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। এই তথ্যচিত্রে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গোপন নির্দেশনার ভয়াবহ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে ১,৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত ও ১০,০০০-এর বেশি আহত হন।

তথ্যচিত্রটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েমের সাক্ষাতকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সাক্ষাতকার না থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সাদিক কায়েমকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যিনি আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষের কাছে তেমন পরিচিত ছিলেন না।

গত শুক্রবার দুপুরে এএইচএম শাহীন নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে এই তথ্যচিত্রের সমালোচনা করে বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্রন্ট লাইনারের মধ্যে নাহিদ ছিলেন একমাত্র দৃশ্যমান আপসহীন চরিত্র। ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ের মধ্যে নাহিদ হয়ে উঠেছিলেন অন্যদের আইকন ক্যারেক্টার। সাদিক কায়েম শিবির পরিচয়ে আত্মপ্রকাশের আগে আমি তাকে চিনতাম না। এটা আমার জানাশোনার সীমাবদ্ধতা নয়। আমার মতো দেশের হাজার হাজার অভ্যুত্থানপন্থি জনতা আন্দোলনে সাদিক নামে কিছু আছে জানতেন না।” তিনি আরও বলেন, “সমস্যা হলো আল-জাজিরা আর সামিরের। আল-জাজিরার পুরো ডকুমেন্টারিতে কৌশলগতভাবে জুলাইয়ের মেইনস্ট্রিম হিসেবে সাদিককে সামনে আনা হয়েছে। ব্যালেন্স করার জন্য আল-জাজিরা নাহিদকে রিচ করতে পারলো না। নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুই সার্ভাইবার নাহিদ-আসিফের একটা সাক্ষাতকার নেওয়া গেল না।”

শাহীনের এই স্ট্যাটাসের পক্ষে-বিপক্ষে নেটিজেনদের মধ্যে নানা মন্তব্য দেখা গেছে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নাজিফা জান্নাত এই স্ট্যাটাস শেয়ার করে নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, “আল-জাজিরার এই রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কষায়ে থাপড়ানো উচিৎ। আই মিন সিরিয়াস জবাবদিহিতার মধ্যে আনা উচিৎ। ছাত্রলীগের আমব্রেলার নিচে ঘাপটি মেরে থাকা সাদিক কায়েম নাকি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কি ফিগার। শেইম!” তবে নাজিফার বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ সাদিক কায়েমের সাক্ষাতকারকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি শক্তি হিসেবে মেনে নিলেও আল-জাজিরার প্রতিবেদনের ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “হাসিনার জুলাইয়ের ৩৬ দিন নামে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে অনেক নতুন তথ্য উঠে এসেছে। তবে সাদিক কায়েমকে অত্যধিক ফোকাস দেওয়া হয়েছে, যা চোখে লাগার মতো।”

আল-জাজিরার তথ্যচিত্রটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উপর আলোকপাত করলেও এর উপস্থাপনা এবং সাক্ষাতকারের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিতর্ক আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং এর প্রকৃত নায়কদের নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে।

শিশুশ্রম নিরসনে বিএনপির দৃঢ় প্রতিজ্ঞা: ঠাকুরগাঁও মডেলের প্রশংসা মির্জা ফখরুলের

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে শিশুশ্রম নিরসন করে কর্মজীবী শিশুদের শিক্ষা ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এই ইস্যুকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে দলটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

শনিবার বিকালে ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দনগরে ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)-এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। ‘শিশুশ্রম নিরসনে ঠাকুরগাঁও মডেল: অভিজ্ঞতা ও সাফল্য উপস্থাপন’ শীর্ষক এই আয়োজনে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা শিশুদের শ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে ইএসডিও ঠাকুরগাঁওয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি মনে করেন, এই মডেল সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, “শিশুশ্রম কোনো সভ্য সমাজে কাম্য নয়। বিএনপি সবসময় শিশু অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এ ধরনের কার্যক্রমে সবসময় সহযোগিতা করে যাব।”

ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জাহেদা পারভীন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শহিদুল ইসলাম এবং জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন পর্যবেক্ষণ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সালমা আলী প্রমুখ।

যশোর যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা ইস্কান্দার আলী জনি ঢাকায় গ্রেফতার

 যশোর জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক ইস্কান্দার আলী জনি (৪২) কে রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে গ্রেফতার করেছে যশোর ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশ। শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাত ৮টার দিকে খিলক্ষেতের তালেরটেক থানার দক্ষিণ নামাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার সকালে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ইস্কান্দার আলী জনি যশোর সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাবলাতলা এলাকার মৃত শেখ সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি যুবদলের পদে থাকাকালীন দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও বিষোদ্গারের কারণে দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের অভিযোগে বহিষ্কৃত হন।

যশোর ডিবি পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জনি জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলামের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। এছাড়া, জেলা বিএনপির সভাপতিসহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার, কুতসা ও ভীতি প্রদর্শন করে আসছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যশোর সেনানিবাসে ছিলেন এবং জেলা যুবদলের ততকালীন সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে সদস্য সচিব) আনসারুল হক তাকে ভারতে পালাতে সাহায্য করেছেন বলে ফেসবুকে মন্তব্য করেন। এসব গুজব ছড়িয়ে সেনাবাহিনী ও দেশের মানুষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়।

যশোর ডিবির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনজুরুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার রাতে খিলক্ষেতের দক্ষিণ নামাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে জনিকে গ্রেফতার করা হয়। ওসি মনজুরুল হক ভূঁইয়া জানান, জনির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের পর তাকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে, যেখানে একজন অফিসার তার মামলার তদন্ত করছেন।

গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল রাত ১টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের অবহিত করে। পুলিশ জানায়, আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় জনি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন।