জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় পর শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকালে এ ফল ঘোষণা করা হয়।

নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী প্যানেল থেকে আব্দুর রশিদ জিতু এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে শিবির প্যানেল থেকে মো. মাজহারুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে শিবির প্যানেল থেকে ফেরদৌস আল হাসান এবং আয়েশা সিদ্দীকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যান্য পদে নির্বাচিতরা হলেন:

  • শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক: আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল)

  • পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক: মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল)

  • সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক: মো. জাহিদুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)

  • সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র)

  • সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মো. রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল)

  • নাট্য সম্পাদক: মো. রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)

  • ক্রীড়া সম্পাদক: মাহমুদুল হাসান কিরন (স্বতন্ত্র)

  • সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী): ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল)

  • সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ): মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল)

  • তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক: মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল)

  • সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক: আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস)

  • সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী): নিগার সুলতানা (শিবির প্যানেল)

  • সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ): মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল)

  • স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক: হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল)

  • পরিবহণ ও যোগাযোগ সম্পাদক: মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল)

কার্যকরী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন:

  • মো. তরিকুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)

  • মো. আবু তালহা (শিবির প্যানেল)

  • মো. মহসিন (শিবির প্যানেল)

  • নাবিলা বিনতে হারুণ (শিবির প্যানেল)

  • ফাবলিহা জাহান (শিবির প্যানেল)

  • নুসরাত জাহান ইমা (শিবির প্যানেল)

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশা ও উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে।

ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে: আমান উল্লাহ আমান

 বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার প্রেক্ষিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জের নেকরোজবাগ মাঠে আবদুল খালেক স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আমান বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছরের সংগ্রামের পর বিএনপি আবার জনগণের দোরগোড়ায় ফিরে এসেছে। বেগম খালেদা জিয়া নিজে ৬ বছর কারাবাস করেছেন, আমিও দীর্ঘ সংগ্রাম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। আমিও স্পষ্টভাবে বলতে চাই—ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি সবসময় জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল এবং আছে। জনগণের শক্তির কাছে কোনো স্বৈরশাসক টিকে থাকতে পারেনি, এবারও পারবে না।”

অনুষ্ঠানে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে ঘাটারচর ফুটবল দল ও তালেপুর ফুটবল দলের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক খেলা অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ে কোনো দল গোল করতে না পারায় খেলা টাইব্রেকারে গড়ায়। রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে তালেপুর ফুটবল দল ৪-৩ গোলে ঘাটারচর ফুটবল দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামিম হাসান, সাধারণ সম্পাদক হাসমত উল্লাহ নবী, সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা যুবদলের আহ্বায়ক হাজী আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দুই নেতাকে বহিষ্কার: শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ

দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি তাদের দুই নেতাকে বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃত নেতারা হলেন মোহাম্মদপুর থানার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মান্নান হোসেন শাহীন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম অপু।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বে) এ বি এম এ রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে প্রাথমিকভাবে তাদের পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু নিজেদের সংশোধন না করায় তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মান্নান হোসেন শাহীন ও জহিরুল ইসলাম অপুর বিরুদ্ধে কাঁটাসুর নামার বাজার দখল, ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মান্নান হোসেন শাহীন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

ছাত্ররাজনীতি জনগণের স্বপ্ন ও ন্যায়ের জন্য হবে: আ স ম আবদুর রব

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার পাশাপাশি জনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেবে। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরার বাসভবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বৈ. স)-এর নবগঠিত কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন বিজয় এবং সাধারণ সম্পাদক নাবিলা সুলতানার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।

আ স ম আবদুর রব বলেন, “ছাত্ররাজনীতি কখনোই ব্যক্তিগত, দলীয় বা গোষ্ঠীগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার খেলা হতে পারে না। রাজনীতি হচ্ছে ন্যায়, শিক্ষা ও মানুষের মর্যাদার জন্য লড়াই। ক্ষমতার লড়াইকে প্রাধান্য দিলে রাজনীতি স্বার্থনির্ভর ও স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠে। তবে জনগণের স্বপ্ন ও ন্যায়কে কেন্দ্রে রাখলে রাজনীতি হয়ে ওঠে একটি নৈতিক প্রক্রিয়া, যা সমাজের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণ, শিক্ষা ও গণমুখী শক্তিকে প্রসারিত করে।”

সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বৈ. স)-এর সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের অপ্রত্যাশিত জয় এবং বিএনপিসহ জুলাই অভ্যুত্থানপন্থি শক্তির পরাজয় শুধু একটি সাংগঠনিক দৃশ্য নয়; এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির নৈতিক ভিত্তি ও দার্শনিক দিকনির্দেশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মুহূর্ত। এই বাস্তবতার আলোকে পুরোনো রাজনীতি ও কৌশল অতিক্রম করে সমাজ উপযোগী রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি ও কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।”

সৌজন্য সাক্ষাতে জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ছাত্রলীগ (বৈ. স)-এর নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাহিদ হাসান রিমন, মোহাম্মদ রুবন আকরাম, আসিফুল ইসলাম রিয়াজ, ইমতিয়াজ আহমেদ সিয়াম, সাইফ তাসনিম চৌধুরী, তারেক রহমান, জাহিদুল ইসলাম রিয়াজ, মেহেদী হাসান, আশরাফুল আলম জুয়েল, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পরিবর্তনের প্রতিবাদে বুধন্তীতে মশাল মিছিল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রকাশিত আসন পুনর্বিন্যাসের খসড়া তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়নকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে স্থানীয় জনগণ। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার অবস্থানের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৮টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের বুধন্তী বাস স্ট্যান্ডে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এই মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বুধন্তী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমানের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই বিক্ষোভে কয়েকশত মানুষ অংশ নেন। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণ এতে যোগ দেন।

প্রতিবাদকারীরা অভিযোগ করেন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, যিনি বুধন্তী ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেছেন, তিনি নিজের পৈত্রিক এলাকার মানুষের আবেগ ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে নিজের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তারা বলেন, “জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ানো কোনো প্রকৃত রাজনৈতিক ব্যক্তির কাজ হতে পারে না।” বিক্ষোভকারীরা বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়নকে পুনরায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

মশাল মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী, বুধন্তী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. মাহবুবুর আলম, সাধারণ সম্পাদক রাস্টু মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল, বুধন্তী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. কামাল মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন খোকন, বিজয়নগর উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক রতন মোল্লা, বুধন্তী ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির মোল্লা, এবং বুধন্তী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শামীম ফকির প্রমুখ।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়নকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই স্থানীয় জনগণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের জয়, মির্জা আব্বাসের বিস্ফোরক অভিযোগ

গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে শীর্ষ তিনটি পদে জয়লাভ করেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। ভিপি পদে বিজয়ী হয়েছেন মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম), জিএস পদে এসএম ফরহাদ এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান। এছাড়া, ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা, বাকি তিনটি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

নির্বাচনের ফলাফলের পর বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘আঁতাত করে’ ছাত্রশিবির এই নির্বাচনে জয়ী হয়েছে।

মির্জা আব্বাস বলেন, “আমি বলতে পারি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর এত ভোট কোত্থেকে আসল। আমার তো হিসাব মেলে না ভাই।” তিনি এই ফলাফলকে কারচুপি হিসেবে না দেখে দেশে ‘গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস’ বলে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, “যখনই আমরা বিভিন্ন দল একসঙ্গে বসি, জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বারবার বলেন, ‘ভাই খেয়াল রাইখেন আওয়ামী লীগ যেন আর কোনো দিন আসতে না পারে।’ কিন্তু তলে তলে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট নিয়ে নিল।”

এই অভিযোগের মাধ্যমে মির্জা আব্বাস ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন।

শামা ওবায়েদ: গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির লড়াই চলবে

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু বলেছেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে আসছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যতদিন এই গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিন এই যুদ্ধ চলবে। বাংলাদেশে বিএনপি একমাত্র দল, যার কাছে গণতন্ত্র নিরাপদ।”

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকালে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মুরাটিয়া স্কুল মাঠে স্থানীয় বিএনপির আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শামা ওবায়েদ আরও বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা তার কর্মীদের ফেলে পালিয়ে গেছেন। ফরিদপুর-২ আসনে বিনাভোটের এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পালিয়েছেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। আমার বাবা মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমান সালথা-নগরকান্দায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে দেখভাল করেছেন। তার সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব, যে যেই ধর্ম বা দলের হোক, সবাইকে দেখভাল করা।”

সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান হবির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার, সালথা উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. শাহীন মাতুব্বর, উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আছাদ মাতুব্বর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার খায়রুল বাসার আজাদ, যুবদল নেতা তৈয়বুর রহমান তৈয়ব প্রমুখ।

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ২৩ পদে জয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৫ পদে বিজয়

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন-২০২৫-এ ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। তবে, পাঁচটি পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল সাড়ে ৮টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন ডাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন যুবাইর বিন নেছারী, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সানজিদা আহমেদ তন্বি। এছাড়া সদস্য পদে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন হেমা চাকমা এবং উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া।

ভিপি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) ১৪,০৪২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫,৭০৮ ভোট। জিএস পদে ছাত্রশিবিরের এস এম ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫,২৮৩ ভোট, এবং প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু ৪,৯৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। এজিএস পদে ছাত্রশিবিরের মুহা. মহিউদ্দিন খান ১১,৭৭২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন, যেখানে ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫,০৬৪ ভোট।

এছাড়া ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা আরও ২০টি পদে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতেমা তাসনিম জুমা ১০,৬৩১ ভোট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইকবাল হায়দার ৭,৮৩৩ ভোট, আন্তর্জাতিক সম্পাদক খান জসিম ৯,৭০৬ ভোট, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ ৯,০৬১ ভোট, ক্রীড়া সম্পাদক আরমান হোসাইন ৭,২৫৫ ভোট, কমনরুম, রিডিংরুম ও কাফেটেরিয়া সম্পাদক উম্মে সালমা ৯,৯২০ ভোট, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক সাখাওয়াত জাকারিয়া ১১,৭৪৭ ভোট, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এম এম আল মিনহাজ ৭,০৩৮ ভোট এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ৯,৩৪৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

সদস্য পদে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে বিজয়ী হয়েছেন সাবিকুন্নাহার তামান্না (১০,০৪৮ ভোট), সর্বমিত্র (৮,৯৮৮ ভোট), আনাস ইবনে মুনির (৫,০১৫ ভোট), ইমরান হোসেন (৬,২৫৬ ভোট), তাজিনুর রহমান (৫,৬৯০ ভোট), মেফতাহুল হোসেন আল মারুফ (৫,০১৫ ভোট), বেলাল হোসাইন অপু খান (৪,৮৬৫ ভোট), রাইসুল ইসলাম (৪,৫৩৫ ভোট), মো. শাহিনুর রহমান (৪,৩৯০ ভোট), মোছা. আফসানা আক্তার (৫,৭৪৭ ভোট) এবং রায়হান উদ্দীন (৫,০৮২ ভোট)।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। কোনো বড় ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয় ডাকসুর ৩৮তম নির্বাচন। এবার ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে ৪৭১ জন প্রার্থী এবং ১৮টি হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে ১,০৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ভোটার ছিলেন ৩৯,৮৭৪ জন, যার মধ্যে ছাত্রী হলে ১৮,৯৫৯ এবং ছাত্র হলে ২০,৯১৫ জন ভোটার ছিলেন।

ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের বড় জয়, ছাত্রদলের ভরাডুবি

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন-২০২৫-এ ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল বড় জয় পেয়েছে। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদ এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মহিউদ্দিন খান জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে, ছাত্রদলসহ অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীরা উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়েছেন।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) ১৪,০৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫,৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা ৩,৩৮৯ ভোট এবং শামীম হোসেন ৩,৬৮১ ভোট পেয়েছেন।

জিএস পদে ছাত্রশিবিরের এস এম ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫,২৮৩ ভোট, এবং প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪,৯৪৯ ভোট। এজিএস পদে ছাত্রশিবিরের মহিউদ্দিন খান ১১,৭৭২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন, যেখানে ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫,০৬৪ ভোট।

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে। তবে, কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম নেতাকর্মীদের কোনো মিছিল না করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক ফেসবুক পোস্টে জাহিদুল ইসলাম লিখেছেন, “আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ মহান। অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই বিজয়ী হলো। আমরা সারা দেশের কোথাও কোনো মিছিল করব না। শুধু মহান রবের নিকট সিজদার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করবো। এই বিজয় আল্লাহর একান্ত দান। আমরা অহংকারী হবো না, সবার প্রতি উদার ও বিনয়ী থাকবো।” তিনি আরও বলেন, “স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ার পথযাত্রী, আমরা থামবো না। প্রিয় মাতৃভূমি হবে সবার বাংলাদেশ।”

নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। প্রায় ৩৯,৮৭৪ জন ভোটারের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী। ফলাফল ঘোষণা করা হয় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে।

তবে, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা কারচুপির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা ফেসবুকে লিখেছেন, “ডাকসু বর্জন করলাম। সম্পূর্ণ নির্লজ্জ কারচুপির নির্বাচন। পাঁচই অগাস্টের পরে জাতিকে লজ্জা উপহার দিল ঢাবি প্রশাসন।”

নড়াইলে বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত, মামলা প্রক্রিয়াধীন

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ব্রাহ্মণডাঙ্গা বাজারে চা দোকানি ও বিএনপি কর্মী আব্দুর রহিমকে (৩৫) কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে প্রতিপক্ষরা। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। আহত রহিমকে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, মালয়েশিয়া প্রবাসী হুমায়ুন শেখের সমর্থকদের ডাকে গণসমাবেশে অংশ না নেওয়ায় এই হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রহিমের দুই পা ও কোমরে কোপ দেয়, যার ফলে তার শরীরে অন্তত ২০টি সেলাই পড়েছে।

এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক এবং হুমায়ুন শেখ বিদেশে থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

লোহাগড়া থানার ওসি শরিফুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ তৎপর রয়েছে।

ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে প্রকাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, ৮০ শতাংশ বা তার বেশি ভোট কাস্ট হয়েছে। ফলাফল রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে প্রকাশ করা হবে।’

বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় শেষ হয়েছে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ইতোমধ্যে গণনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দুপুর ১টার মধ্যে অধিকাংশ ভোট কাস্ট হয়ে গেছে, এবং এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।

ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৯৫৯ জন এবং ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন।

নির্বাচনে ২৮টি পদের জন্য ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া, ১৮টি হল সংসদে প্রতিটিতে ১৩টি করে মোট ২৩৪টি পদের জন্য ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এবারের ডাকসু নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১০টি প্যানেল অংশ নিয়েছে, এবং এর বাইরে কিছু প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অস্ট্রেলিয়ায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন: আলোচনা, পুরস্কার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

 অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় লাকেম্বার লাইব্রেরি হলে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অস্ট্রেলিয়া বিএনপির সভাপতি এএফএম তাওহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং প্রকৌশলী মশিউর রহমান মুন্না, শফিউল আলম শফিক ও আবিদা সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ার কাজে অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ও এমপিদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

আমীর খসরু বলেন, “আগামী দিনে নির্বাচন যাতে সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে হয়, সেটিই মুখ্য বিষয়। বিএনপি ক্ষমতায় এলে অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ও এমপিদের সহযোগিতা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন হবে। আপনাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গঠিত বিএনপির আদর্শে আপনারা বিশ্বাসী। আপনারা বিদেশে কষ্ট করে দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান রেখেছেন। তা অব্যাহত রাখতে হবে।” তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বিএনপির নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং বিগত আন্দোলনে তাদের অবদানের প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদুল হক। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। একটি চক্র বাংলাদেশে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এর দাঁতভাঙা জবাব দিতে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।” তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং বাধাদানকারীদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। এছাড়া, তিনি সুখবর দেন যে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীরা এবার নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, যদিও প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে এখন সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে, এবং এই প্রক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়া বিএনপির অবদান রয়েছে।

অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন অস্ট্রেলিয়া বিএনপির কোশাধ্যক্ষ মনজুরুল হক আলমগীর। স্বাগত বক্তব্য দেন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সেলিম লকিয়ত। অস্ট্রেলিয়া বিএনপির সভাপতি এএফএম তাওহীদুল ইসলাম বলেন, “তারেক রহমান শহীদ জিয়াউর রহমানের মতোই আদর্শবান কাণ্ডারি হবেন। জিয়ার আদর্শের প্রতিচ্ছবি আমরা তারেক রহমানের মধ্যে দেখি। তিনি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নেতৃত্বে বাবার মতোই অবদান রাখবেন।” তিনি জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেমের প্রশংসা করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার জিয়াকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। বিএনপি ৪৭ বছরের ত্যাগ, সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের মাধ্যমে এই জায়গায় পৌঁছেছে।”

স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ অমি ফেরদৌস বিএনপির সংগ্রাম ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যাতে ৪০ জন শিশু অংশ নেয়। জিয়া সাইবার ফোর্স (জেডসিএফ) অস্ট্রেলিয়া শাখার নব-অনুমোদিত কমিটির আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম শিবলি ও সদস্য সচিব বাদশা বুলবুলকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এছাড়া, বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক নামিদ ফারহানের তত্ত্বাবধানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়া বিএনপির সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ও শাহ আলম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস কাঞ্চন শহীন, যুগ্ম সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত সবুজ, যুবদলের জাহাঙ্গীর আলম ও ফারুক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের মশিউর রহমান তুহিন, জাহিদুর রহমান, খাজা দাউদ হোসেন, আশওয়াদুল হক বাবু, ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, রেজনুর রহমান রুপন, মোস্তাফিজুর রহমান লাবু, জুম্মন হোসেন, মোকসেদ আলম দীপু, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ শাহেদ, হান্নান রানা, মফিজুল ইসলাম সাগর, আব্দুল আলীম, খাদিজা জামান রুপম, হাসনা হেনা, আজিজুন নাহার মালা, মুরাদ হোসেন, মোহাম্মদ আলী, ওয়ারিস মাহমুদ, আহসান হাবিব, আবু বকর সিদ্দিক, শাহীনূর রহমান, আবুল হোসেন, হারুনর রশিদ, মোহাম্মদ নূরুর হক, ফখরুল হক মুন্না, মোবারক হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও আসলাম খান প্রমুখ।

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে মিরপুরে এনসিপির বিক্ষোভ

 আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় মিরপুর-১ থেকে শুরু হওয়া এই মিছিল সরকারি বাংলা কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে এনসিপির মিরপুরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। নেতৃত্ব দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট জায়েদ বিন নাসের।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট জায়েদ। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও দলটি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে মিছিল করছে। প্রশাসন এখনো পুরোনো স্বৈরাচারী কাঠামোতেই চলছে, যা দিয়ে জনগণের কল্যাণ সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, “জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চক্রান্ত চলছে। তাই জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। স্বৈরাচারকে সমর্থনদাতাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”

এনসিপির নেতারা অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক ধরনের ‘পিছনে ফিরে যাওয়া’র রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী।

ডাকসু নির্বাচন: সারজিস আলমের পরামর্শ, বিবেকবোধের ভিত্তিতে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করুন

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের নির্ধারিত আটটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। দেশব্যাপী আলোচনার শীর্ষে থাকা এই নির্বাচনের প্রাক্কালে ভোটারদের প্রতি সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছেন ন্যাশনাল সিটিজেন্স প্ল্যাটফর্মের (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাসে তিনি এই পরামর্শ দেন। স্ট্যাটাসে সারজিস লিখেছেন, “নাজিরাবাজার, স্টার কাবাব এলাকা, ডিপার্টমেন্ট, ক্লাব কিংবা অভিনব আরও অনেক কোরাম বা ইজম—সবকিছু আজকে রাতে ঘুমানোর আগে পর্যন্তই মনে রাখবেন। ঘুম থেকে উঠে নির্দিষ্ট পদে সেই মানুষটাকে নির্বাচিত করবেন, যিনি আপনার বিবেকবোধের জায়গা থেকে ওই পদে সবচেয়ে যোগ্য।”

তিনি আরও বলেন, “যোগ্যতা মানে এটা নয়, কার সিজিপিএ কত কিংবা কে ওই বিষয়ে কতটা দক্ষ। ওই বিষয়ে তার কিছুটা ধারণা থাকতে হবে—এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও মনে রাখতে হবে, আপনি এখানে একাডেমিশিয়ান নির্বাচিত করছেন না। আপনি আপনার লিডার নির্বাচিত করছেন, আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব নির্বাচিত করছেন।”

সারজিস তার স্ট্যাটাসে জোর দিয়ে বলেন, “আপনার লিডার এমন হতে হবে, যিনি সরকার পালাবদলের পরও আপনার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আপসহীন থাকবেন, সাহস নিয়ে যৌক্তিক দাবি আদায়ে ক্ষমতার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলবেন। ইশতেহার দেওয়া, নির্বাচিত হওয়া আর দাবি আদায় করে বাস্তবায়ন করার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।”

তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, “আপনি ডাকসুতে নিজের ভোট দেওয়ার সময় নিজের বিবেকবোধের সঙ্গে যতটুকু ন্যায়বিচার করবেন, আগামীর বাংলাদেশ থেকে নিজের প্রতি ঠিক ততটুকুই ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করবেন। ডাকসুর জয় হোক।”

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন: খালেদা জিয়ার অবদান ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অবদান তুলে ধরে বলেন, “দেশনেত্রী দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এবং গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি কখনো মাথা নত করেননি।”


তারেক রহমানকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বদাতা হিসেবে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “দেশের মানুষ আজ তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার নেতৃত্বে আগামী দিনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা হবে।” তিনি আরও বলেন, বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং ভিশন ২০৩০–এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা দিয়েছে। বর্তমানে ৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনীতি, রাজনৈতিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে দলটি।


মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট শাসনে’ দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক দলগুলোর হাজারো নেতাকর্মী মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, “২৪ জুলাই ঢাকার রাজপথে হাজারো তরুণ, যুবক, নারী ও শিশু তাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে গত ১৫ বছরে আমাদের ১২ জন সহকর্মী শহীদ হয়েছেন, শুধু জুলাই মাসেই প্রাণ দিয়েছেন চারজন। আওয়ামী লীগ এখানে ৭৫টি মামলা দিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার নেতাকর্মীকে হয়রানি করেছে।”


তিনি আরও বলেন, “আজকের এই সম্মেলন আমাদের কাছে আনন্দের, তেমনি দুঃখেরও। আনন্দের কারণ, আমরা মুক্ত পরিবেশে গণতান্ত্রিক কার্যক্রম চালাতে পারছি। আর দুঃখের কারণ, আমরা অনেক প্রিয় সহযোদ্ধাকে হারিয়েছি।” স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে ফখরুল বলেন, “জিয়াউর রহমান একটি দল গড়ে দিয়েছিলেন, যে দল গণতন্ত্র রক্ষার জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে।”


বিকাল সাড়ে তিনটায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন বলে জানানো হয়।

কুমিল্লায় ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, পুলিশ আসার আগেই পলায়ন

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিশ্বরোড এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের এই মিছিলে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, মিছিল শুরুর আগে কয়েকশ ব্যক্তি মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ছত্রভঙ্গ হয়ে অবস্থান নেন। এরপর হঠাৎ স্লোগান দিতে দিতে তারা মহাসড়কে মিছিল শুরু করেন। কয়েক মিনিট স্থায়ী এই মিছিলে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিল শেষে মিছিলকারীরা প্রায় ২০-৩০ মিনিট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পুলিশের উপস্থিতি টের পাওয়ার আগেই মিছিলকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ। এ ধরনের অবৈধ সমাবেশ ও মিছিলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার পরিকল্পনা: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন দিগন্ত

 ১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে টানা ৪৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন শেখ হাসিনা। তবে তার অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্ব কে বা কারা সামলাবেন, সেই উত্তরাধিকার পরিকল্পনা বা ‘সাকসেসন প্ল্যান’ নিয়ে তিনি কখনোই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। এই অস্পষ্টতা গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনা ভারত সরকারের ‘অতিথি’ হিসেবে ভারতে অবস্থান করছেন। সেখানে তার গতিবিধি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। এই সুযোগে এবং পরিস্থিতির চাপে তাকে এখন উত্তরাধিকারের এই অমীমাংসিত বিষয়টির সমাধানের দিকে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। এছাড়া, চলতি মাসে ৭৮ বছর বয়সে পা দেওয়ার কারণে বয়সের তাগিদও তার এই পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করছে।

বিবিসি বাংলার তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। এছাড়া, তার বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও এই পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

এই ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেল’ অনুসরণ করছেন। কংগ্রেসে যেমন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, তেমনি শেখ হাসিনাও তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একই ধরনের কাঠামো গড়তে চাইছেন।

মাত্র দুই মাস আগেও সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে হু তাকে অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে পাঠানোর পর তিনি এখন পুরোদমে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লিতে থাকায় মায়ের সঙ্গে সরাসরি কাজ করছেন। তিনি শেখ হাসিনার ভাষণের খসড়া তৈরি, কর্মসূচির ক্যালেন্ডার নির্ধারণ এবং বাইরের দর্শনার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। গত দুই মাসে তিনি এ ধরনের বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছেন।

অন্যদিকে, মার্কিন নাগরিক ও আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা সজীব ওয়াজেদ দলের প্রধান মুখ ও মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। তিনি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ঘন ঘন সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন এবং দলের বক্তব্য তুলে ধরছেন। তবে দিল্লিতে মায়ের সঙ্গে একই টাইম জোনে থাকায় সায়মা ওয়াজেদের তুলনায় তিনি কিছুটা কম সরাসরি সহায়তা করতে পারছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এই পরিকল্পনার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, “এই মুহূর্তে সাকসেসন প্ল্যান আমাদের অগ্রাধিকার নয়। আমাদের প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।” তবে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা এবং দলের নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে এই লক্ষ্যে কাজ করছেন।

সায়মা ওয়াজেদের হঠাৎ রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পেছনে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত। গত ১১ জুলাই তাকে অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে পাঠানো হয়, যার পেছনে বাংলাদেশ সরকারের অনাগ্রহ এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। ফলে তিনি এখন পুরোদমে মায়ের সঙ্গে দলীয় কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা ভারতের কংগ্রেসের ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেল’ থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন। কংগ্রেসে সোনিয়া গান্ধী ধীরে ধীরে পিছনে সরে গিয়ে ছেলে রাহুল গান্ধীকে সামনে এনেছেন, আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগেও সজীব ওয়াজেদকে সামনে রেখে সায়মা ওয়াজেদ তার পাশে থাকবেন বলে পরিকল্পনা।

শেখ হাসিনার সঙ্গে গান্ধী পরিবারের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং পারিবারিক। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তার বয়সের পার্থক্য মাত্র নয়-দশ মাস। ভারতে সরকারি সফরে এসে তিনি সবসময় সোনিয়া, রাহুল বা প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দেখা করেছেন। ২০২৩ সালের এক সফরে তিনি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যখন রাহুল তার ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছেন। বর্তমানে দলের ‘নিউক্লিয়াস’ ভারতের মাটিতে। শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ দিল্লিতে, সজীব ওয়াজেদ আমেরিকায় এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কলকাতায় অবস্থান করছেন। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই কাঠামোতে উপেক্ষিত। তার বদলে শেখ হাসিনা তিন নেতার ওপর ভরসা করছেন: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক এমপি আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাসিম এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক।

৭৬ বছরের পুরনো আওয়ামী লীগ এখন তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তার পরিবারের সদস্যদের হাতে দলটি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কংগ্রেসের মডেল অনুসরণ করে শেখ হাসিনা তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দলের ভবিষ্যৎ গড়তে চাইছেন, যা আওয়ামী লীগের জন্য একটি ‘স্বাভাবিক পছন্দ’ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিশ্চিত হবে: সালাহউদ্দিন আহমদ

 বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে আসন্ন নির্বাচনের প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “শিগগির তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। সেদিন নির্বাচনের সবকিছু প্রতিষ্ঠা হবে। বিএনপির নির্বাচনের কাজ অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে। প্রচারণা নির্বাচনের মূল বিষয়, সেদিন বিএনপির অর্ধেক প্রচারণাও হয়ে যাবে।” তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে তিনি ‘অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক’ হিসেবে অভিহিত করেন। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে জাতীয়তাবাদী আয়কর আইনজীবী ফোরামের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।” তিনি অভিযোগ করেন, কিছু গোষ্ঠী নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, রমজানের এক সপ্তাহ আগে বা তারও আগে নির্বাচন হতে পারে। যারা এ পথে কাঁটা বিছানোর চেষ্টা করছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তাদের প্রতি নসিহত—দেশ এখন নির্বাচনী আবহে রয়েছে।”

আওয়ামী লীগের প্রতি কড়া সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস শুধু আওয়ামী লীগের। তারা এখন এমন অবস্থায়, যেখানে এক জায়গায় ‘জয়’ বলে, আর দে�ড় মাইল দৌড়ে গিয়ে ‘বাংলা’ বলে। তারা যেন আর দাঁড়াতে না পারে, আগামীর নেতৃত্ব তাদের হাতে থাকবে না।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, “মেজর ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নিলে আগামী নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলোর বাস্তবায়ন সংসদের মাধ্যমে হবে।” তিনি আরও জানান, জুলাই ঘোষণাপত্রে সব রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করবে এবং তা ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। প্রতিটি দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে জুলাই সনদের ঐকমত্যের বিষয়গুলোতে অঙ্গীকার করবে বলেও তিনি মনে করেন।

জুলাই জাতীয় সনদ: বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা, চূড়ান্ত খসড়ার সময়সীমা বাড়ল এক সপ্তাহ

জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সই নেওয়ার জন্য পাঠানোর সময়সীমা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খসড়া পাঠানোর কথা ছিল। সাড়ে ছয় মাসের দীর্ঘ সংলাপের পর তৈরি হওয়া এই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সব দল সই করবে কি না, অধ্যাদেশ জারি করে কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব এবং নির্বাচনের আগে-পরে কী হবে—এসব প্রশ্ন অমীমাংসিত রয়েছে।

সনদের অঙ্গীকার এবং বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ

জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জুলাই সনদের যেসব প্রস্তাব অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ কোনো কালক্ষেপণ ছাড়াই বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সংস্কারের ১৯টি মৌলিক বিষয়ের মধ্যে ১০টিতে বিভিন্ন দলের আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) রয়েছে। বাকি নয়টিতে শতভাগ ঐকমত্য।

কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পর্যালোচনার ভিত্তিতে এ সপ্তাহেই বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনায় বসবে কমিশন। এরপর চূড়ান্ত সনদ ও বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ বৃহস্পতিবারের মধ্যে একসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে।”

সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের ওপর থাকবে বলে জানিয়েছে কমিশন। তারা রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সরকারের কাছে উপস্থাপন করবে।

অধ্যাদেশ জারি: কতটা সম্ভব?

সনদের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে অধ্যাদেশ জারি করে আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি উঠেছে কয়েকটি দল থেকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধ্যাদেশ জারি করে সংবিধান পরিবর্তন সম্ভব নয়। অধ্যাদেশ সংসদ অধিবেশন শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে পাস না হলে কার্যকারিতা হারায়।

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “সংবিধানের যে কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে অধ্যাদেশ জারি করে আইনি ভিত্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে নয়টি বিষয়ে শতভাগ ঐকমত্য হয়েছে, সেটা অধ্যাদেশ দিয়ে আইনি ভিত্তি দিতে পারে।”

আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা একটা সুপারিশ সরকারের কাছে পাঠাব, সেখান থেকে সরকার যেটা ভালো মনে করে করবে। নয়টি বিষয় না দশটি বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করবে, সেটা সরকারের বিষয়।”

সব দল সই করবে কি না: অনিশ্চয়তা

কমিশন ৩০টি দলের কাছে মতামত চেয়েছিল, ২৬টি দল জমা দিয়েছে। চারটি দল মতামত দেয়নি। বামগণতান্ত্রিক জোটের চার দল, গণফোরাম ও বাংলাদেশ জাসদ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি তুলেছে।

সিপিবির প্রিন্স বলেন, “সনদ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের লিখিত মত তারা জানতে চান। চূড়ান্ত খসড়া দেখার পর আপনাদের জানিয়ে দেব।”

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দিলে এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।”

গণফোরামের মিজানুর রহমান বলেন, “চার মূলনীতি পরিবর্তন করলে স্বাক্ষর করা সম্ভব নয়।”

বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ প্রায় ২০টি দল সনদে সই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

‘শতভাগ ঐকমত্য’ নিয়ে দ্বন্দ্ব

কয়েকটি দল মনে করে, শুধুমাত্র সব দলের একমত বিষয়গুলোই ঐকমত্য হিসেবে গণ্য হবে। কমিশন বলছে, অধিকাংশ দলের একমতকেই ঐকমত্য বলা হবে।

প্রিন্স বলেন, “যেসব বিষয়ে অনেকে একমত হয়নি, সেসব বিষয়ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে খসড়ায় বলা হয়েছে। এরকম থাকলে আমরা ঐকমত্যের পক্ষে থাকা সম্ভব হবে না।”

যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত

  • রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তন: বাংলাদেশ জাসদ, সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী), গণফোরাম।

  • রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

  • রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা: বিএনপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, লেবার পার্টি, এনডিএম, এলডিপি, ১২ দলীয় জোট।

  • প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদ: বিএনপি, এনডিএম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট।

  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার: বিএনপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট।

  • উচ্চকক্ষে নির্বাচন: বিএনপি, এনডিএম।

  • উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা: বিএনপি, এনডিএম।

  • উচ্চকক্ষের দায়িত্ব: সিপিবি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, এনডিএম, আম জনতার দল।

  • নারী আসন: সিপিবি, বাসদ, আম জনতার দল।

  • নিয়োগসমূহ: বিএনপি, এনডিএম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট।

আইনি ভিত্তি এবং বিশ্লেষকদের মত

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “যদি আইনগত ভিত্তি না থাকে, তাহলে এটি কেবল কথার কথা থেকে যাবে।”

এনসিপির আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তির জায়গায় নিয়ে আসতে না পারলে এটি অকার্যকর হয়ে যাবে।”

বিএনপি বলছে, সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়া ‘অসম্ভব ও অগ্রহণযোগ্য’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, “জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে পরবর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। সংসদে দুই তৃতীয়াংশ ভোট লাগবে।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে গেলে জাতীয় সংসদ ছাড়া কোনো উপায় নাই। গণভোট করারও সুযোগ নেই।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করতে হলে সংবিধান মেনে শপথ নিলেন কেন? আগামী সংসদ অপেক্ষা করতে হবে।”

জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ কতটা কাজে লাগানো যাবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। সনদের চূড়ান্ত খসড়া পাঠানোর পর দলগুলোর সই নেওয়া শেষ হলেই কমিশনের মূল কাজ সমাপ্ত হবে।

ডাকসু নির্বাচনে আব্দুল কাদেরের জন্য ভোট চাইলেন এনসিপি’র নাহিদ ইসলাম

 জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) মনোনীত ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদেরের জন্য ভোট প্রার্থনা করেছেন। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাতে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এই আহ্বান জানান।

নাহিদ ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আব্দুল কাদের কখনো সমীকরণে থাকে না। গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা কখনো ভাবিনি যে কাদের এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কাদের সবসময় নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছে। জুলাইয়ের আগে ও পরে কাদের সমানভাবে কাজ করে গেছে। কাদেররা তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন জাতির প্রয়োজন পড়ে।”

তিনি আরও লিখেছেন, “গত এক বছরে অনেকে অনেক কিছু হয়েছে। সবাই গণঅভ্যুত্থানের হিস্যা বুঝে নিয়েছে। কিন্তু কাদের সযত্নে নিজেকে সবকিছু থেকে আলাদা রেখেছে। যদিও অনেক কিছুর দায়ভার কাদেরদের উপর এসে পড়েছে।”

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে কাদের ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সব সমীকরণ পাল্টে দিয়ে কাদের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবে, এই প্রত্যাশা রাখি। মাটি থেকে উঠে আসা নেতা আব্দুল কাদের! সাহস ও দেশপ্রেমের প্রতীক আব্দুল কাদেরের জয় হোক!”

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীতে গণঅধিকার পরিষদের সংহতি সমাবেশ

জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীতে সংহতি সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ। এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, খেলাফত মজলিসসহ অন্তত ৩০টি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল সংহতি জানায়।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোট নিষিদ্ধের জোর দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে এবং জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হতে সহযোগিতা করেছে। এখনো জাতীয় পার্টি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, দায়ীদের শাস্তি, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, “স্বৈরাচার পালিয়েছে, তবু নূরের ওপর হামলা হচ্ছে কেন? শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে চ্যাপ্টার ক্লোজড। জাতীয় পার্টির মাধ্যমে তাকে ফেরানো যাবে না।”

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “নূরের ওপর হামলা ছিল বাংলাদেশের ওপর হামলা, গণতন্ত্রের ওপর হামলা। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল এখনো রয়ে গেছে। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ নেই।”

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে বলেন, “নূর এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে, নইলে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল ঐক্যের কারণে। কিন্তু এখন বিভক্তি তৈরি হচ্ছে। আমরা কোনো যেনতেন নির্বাচন হতে দেব না। তবে সংস্কার করে নভেম্বরে নির্বাচন হলে আমরা অংশ নেব।”

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, “হাসিনার দোসররা এখনো পুলিশ-সেনাবাহিনীতে আছে। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

হেফাজতে ইসলামের নেতা ও খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, “নূরের ওপর হামলা মানে ১৬ বছরের আন্দোলনকেই আঘাত করা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে, এবার জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, “সংস্কার, বিচার ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চাই। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

এছাড়া জেএসডি, জামায়াত, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা, এনডিএম, এনডিপি, কল্যাণ পার্টি, ডেমোক্রেটিক লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা একই মঞ্চে বসে নিজেদের মধ্যে ঐক্য জোরদারের আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনার মতো কাউকে একনায়ক হতে দেওয়া হবে না: সারজিস আলম

বাংলাদেশের কোথাও শেখ হাসিনার মতো আর কাউকে একনায়ক হয়ে উঠতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে এনসিপির পঞ্চগড় জেলা শাখা আয়োজিত ‘বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান’ শীর্ষক কর্মশালা ও সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সারজিস আলম বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এখনো অনিয়ম, দুর্নীতি, হুমকি ও অপকর্ম চলমান। এর ফলে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে আস্থা হারাতে শুরু করেছে। তিনি ঘোষণা দেন, “চোর, বাটপার, চাঁদাবাজ বা হুমকিদাতা—যেই হোক না কেন, আমরা তাদের নাম-পরিচয়সহ তালিকা প্রকাশ করব। আর শেখ হাসিনার মতো কাউকে আর একনায়ক হতে দেওয়া হবে না।”

তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা ও তার ছাত্রলীগ যা পারেনি, বিএনপির ছাত্রদল সেটাই শুরু করেছে। তারা স্কুল পর্যায়ে কমিটি গঠন করছে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, কোনো স্কুল-কলেজে রাজনীতির নামে নোংরা চর্চা ঢুকতে দেওয়া হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করার চেষ্টা প্রতিরোধ করা হবে।”

সারজিস আলম দাবি করেন, এনসিপির প্রতিপক্ষ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। বরং বিএনপি বা অন্য কোনো দল ভালো কাজ করলে তাদের সম্মান জানানো হবে। তবে কোনো অপকর্ম হলে তা প্রতিরোধ করা হবে যেকোনো মূল্যে।

তিনি অভিযোগ করেন, পঞ্চগড়ের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে এনসিপির নতুন কর্মীদের বিএনপি নেতাকর্মীরা হুমকি দিচ্ছেন। বিশেষ করে দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি সমর্থিত ফরিদুল ইসলাম সম্প্রতি এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ও তার বাবাকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। এটিকে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির স্থিতিশীলতার জন্য ভয়ংকর দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারসহ জেলা এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। রাজনৈতিক কর্মশালা ও সমন্বয় সভায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

ঢাকা মহানগরীতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের মিছিল

 কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকার পরও রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আবার মিছিল করেছেন। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ২টার দিকে তেজগাঁওয়ের নাবিস্কো এলাকায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ব্যানারে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

হাজারের বেশি নেতাকর্মী নাবিস্কো থেকে তিব্বত এলাকায় মিছিল করেন। মিছিলে অংশ নেওয়া লোকজন ‘শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা’, ‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশে হাসবে’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘হটাও ইউনূস, বাঁচাও দেশ’—সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন জানান, সকালে জিএমআই মোড় থেকে কিছু লোক বের হয়েছিল, মিছিল করতে দেওয়া হয়নি। এসময় ছাত্রলীগের নিয়ামুল হাসানকে আটক করা হয়। পরে দুপুরে নাবিস্কো থেকে আবারও মিছিল করা হয়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দুপুর ২টার দিকে প্রায় দুই হাজার লোক নিয়ে আওয়ামী লীগ মিছিল করেছে।

এছাড়া ধানমন্ডিতে কয়েকশত নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল করেন। ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা জানান, বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে।

এর আগে ৩১ আগস্ট ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোড থেকে শংকরের বাংলাদেশ আই হসপিটালের সামনের সড়ক পর্যন্ত মিছিল দেখা যায়। এছাড়া সপ্তাহখানেক আগে গুলিস্তানের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মী বিক্ষোভ করেন।

গণ আন্দোলনে ক্ষমতা হারিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে ছেড়ে ভারতে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিন দিন পর, ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।

কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ফের অগ্নিসংযোগ

রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফের অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে গত শনিবারও দলের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।

পূর্বের ঘটনার প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল করেন। এরপর বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা ব্রিফিং করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের লাঠিপেটা করে।

এই হামলায় গুরুতর আহত হন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নুরের ওপর হামলার ঘটনার পর গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। জামায়াতও জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করা উচিত। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “জাতীয় পার্টি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিল। যেভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনিভাবে জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে।”

এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জিএম কাদের ভারতে গেলেন। তখন সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছেন, ওদের (ভারত) পারমিশন ছাড়া কিছু বলতে পারব না। এটি জাতীয় পার্টি কি ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল? না বাংলাদেশের? এই আপনাদের নীতি ও আদর্শ, এই আপনাদের চরিত্র?”

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব রোববার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অবস্থান জানান।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ: রমনা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক বিল্লাল আজীবনের জন্য বহিষ্কার

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে রমনা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মো. বিল্লাল হোসেন তালুকদারকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক (যুগ্ম সম্পাদক পদমর্যাদা) মো. সাইফুল ইসলাম পলাশ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিন এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদারের সিদ্ধান্তক্রমে এ বহিষ্কারের আদেশ কার্যকর করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বিল্লাল হোসেন তালুকদারকে বহিষ্কারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সব পর্যায়ের নেতা এবং রমনা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের তার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক না রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হলো।

এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিল্লাল হোসেন তালুকদারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কার্যত দলীয় পরিসর থেকে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল।

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী কাদেরের জন্য দোয়া আখতার হোসেনের

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদেরের জন্য দোয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি কাদেরের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন।

আখতার লেখেন, ২০২২ সালে আবরার ফাহাদের শাহাদাতবার্ষিকীর কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে গেলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। সেই সময় জেলে কাদেরের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে আখতার বলেন, বয়সে ছোট হলেও কাদের তখন সাহস জুগিয়েছিল। জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে হাসিনার পতন ঘটানোর স্বপ্নের কথাও জানিয়েছিল সে।

তিনি আরও লিখেছেন, ক্যাম্পাস জীবনে অসংখ্য হুমকির মধ্যেও কাদের সবসময় মাথা উঁচু করে প্রতিবাদ করেছে। অন্যরা নিরাপদ থাকার পথ বেছে নিলেও কাদের সামনে এসে ঝুঁকি নিয়েছে।

আখতার জানান, গত বছরের অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য আট দফা সামনে আনা হলে কাদের সাহস করে নয় দফা ঘোষণা দিয়েছিল। তার সেই উদ্যোগ আন্দোলনকে এক দফার পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।

ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লেখেন, “আমি তখন সামর্থ্যের মধ্যে ছোট ছোট কাজ করেছি। কিন্তু ৫ আগস্টের বিজয়ের পর কাদের পুরো ক্যাম্পাসকে আপন করে নিয়েছে।”

তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালে ছাত্রাবস্থায় ভিপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। তবে ২০২৫ সালে ডাকসু নির্বাচন হলেও তিনি আর ক্যাম্পাসে নেই। এ সময় তিনি বলেন, “এখন কাদের ভিপি পদে লড়ছে। কাদেরের জন্য অনেক দোয়া রইল। ফি আমানিল্লাহ।”

কিশোর গবেষক নাবিলকে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আর্থিক অনুদান

দশম শ্রেণির কিশোর গবেষক আহনাফ বিন আশরাফ নাবিলকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কলেজপাড়া এলাকায় এ শুভেচ্ছা জানানো হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নাবিলের বাড়িতে গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান এবং সম্মাননা ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি জহিরুল হক খোকন, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থী নাবিল ‘গার্ডিয়ান এঞ্জেল’ নামে একটি অ্যাপস উদ্ভাবনের কাজ করছে। অ্যাপসটির মাধ্যমে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন রোধসহ মোট ১৯টি বিষয়ে ডিজিটাল সমাধান দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এত অল্প বয়সে নাবিলের উদ্ভাবনী চিন্তাধারা অবিশ্বাস্য। তার প্রতিভা দেখে তারেক রহমান অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “দেশে আজ গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের যে অভাব, তা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। শেখ হাসিনা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যে রক্তস্রোত বইয়ে দিয়েছেন, তাতে প্রশাসনের কিছু অংশ এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবে জনগণের শক্তির কাছে কেউ টিকতে পারবে না।”

রিজভী আরও অভিযোগ করেন, “শেখ হাসিনা চলে গেলেও তার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারা এখনো প্রশাসনের ভেতরে সক্রিয়। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম ব্যাহত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। তবে জনগণই শেষ কথা বলবে।”

তিনি বলেন, “প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে— এই গণতান্ত্রিক চেতনাকেই শেখ হাসিনা দমন করেছেন।”

জুলাই সনদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে রিজভী বলেন, “নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কোনো দলিল বা চুক্তি আইনের ভিত্তি হতে পারে না। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী।”

জিএম কাদের ও তার স্ত্রীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এবং তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।

দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, জিএম কাদের ও তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে।

আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গোপন সূত্রে জানা গেছে— অভিযুক্তরা দেশত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং বিদেশে পালিয়ে গিয়ে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এতে তদন্ত ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন বলেও দুদক তাদের আবেদনে উল্লেখ করে।

উল্লেখ্য, অনুসন্ধানাধীন অভিযোগের ভিত্তিতে দেশে ও বিদেশে জিএম কাদের ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে, যা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি পাজেরো কেনার সিদ্ধান্তে সমালোচনা, বললেন তাসনুভা জাবিন: ‘মন্ত্রী হওয়ার সাথেই গাড়ির আগাম ব্যবস্থা!’

আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০টি মিতসুবিশি পাজেরো (কিউএক্স-২৪২৭ সিসি) মডেলের গাড়ি কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি গাড়ির মূল্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে শুরু হয়েছে সমালোচনা, যার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনুভা জাবিন।

বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তাসনুভা জাবিন অর্থ উপদেষ্টার কড়া সমালোচনা করে লিখেছেন, “অর্থ উপদেষ্টা কতটা কেয়ারিং আর কৃতজ্ঞ বন্ধুর প্রতি, বন্ধু মন্ত্রী হওয়ার সাথেসাথেই যাতে নতুন গাড়িতে চড়তে পারেন, আগাম ব্যবস্থা।”

তিনি আরও বলেন, “আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ১০১ কোটি টাকার পাজেরো গাড়ির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়—এই উদ্যোগ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়, ক্ষমতার রাজনীতিতে কারা অগ্রাধিকার পায়, আর কারা থেকে যায় অগ্রাহ্যের তালিকায়।”

তাসনুভা জাবিন প্রশ্ন তুলে বলেন, “যে গণঅভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে যে জুলাই সনদ, সেটার বাস্তবায়নের জন্য পরের সংসদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে। অথচ সেই শহীদ-আহতদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত সরকার এখন মন্ত্রীদের বিলাসবহুল গাড়ি কিনছে। এই শহীদদের বিচার বা নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা হয়নি, এমনকি তাদের একটি সঠিক তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি।”

এনসিপির এই নেত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই সরকার নাকি ছাত্রদের—এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার। সরকারের সকল ব্যর্থতার দায় যেন ছাত্রদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়, আর গণঅভ্যুত্থানের সব কৃতিত্ব ভাগাভাগির শেষে এক ভাগ যায় ছাত্রদের কপালে।”

সরকারের এই ব্যয়বহুল গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তে দেশের নানা মহলে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এমন সময়ে এই উদ্যোগ, যখন দেশের অর্থনীতি নানা চাপে আছে, সেটি কতটা যৌক্তিক—সেই প্রশ্নও উঠেছে নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে।

নির্বাচনে জোট নিয়ে এখনই নিশ্চিত না বিএনপি: রুমিন ফারহানা

 আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি এখনো কোনো রাজনৈতিক জোটে যাচ্ছে কি না—এ নিয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

রুমিন ফারহানা বলেন, “নির্বাচনে এখনো চার মাস বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো জোট হতে পারে—সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে এই মুহূর্তে আমি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না।”

তিনি অতীতের নির্বাচনী চিত্র তুলে ধরে বলেন, “আমরা অতীতে এমন নির্বাচন দেখেছি যেখানে এক দলের প্রতীকে না দাঁড়িয়ে অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। যেমন—নৌকার সমর্থনে লাঙ্গলের প্রার্থী, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইত্যাদি। আমি একজন নাগরিক, আইনজীবী এবং রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এমন নির্বাচন একদমই চাই না।”

বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচনী জোট খুব একটা কার্যকর হবে না বলেও মত দেন তিনি। “কোনো আসনে যদি দ্বিতীয়, তৃতীয় এমনকি পঞ্চম অবস্থানে থাকা প্রার্থীও ওই দলেরই হন, তাহলে জোটের প্রার্থীর পক্ষে জয়ী হওয়াটা কঠিন হবে,” বলেন রুমিন।

আওয়ামী লীগের আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রসঙ্গে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণেই আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে। এটা খুবই উদ্বেগজনক একটি ইঙ্গিত।”

এদিকে, জামায়াত ইসলামী সম্প্রতি বিএনপিকে বাইরে রেখে একটি নতুন জোট গঠনের চিন্তা করছে—যেখানে ডানপন্থি, বামপন্থি ও মধ্যপন্থি দলগুলো একত্রিত হতে পারে বলে জানা গেছে। এই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রুমিন বলেন, “কারা কারা এই জোটে থাকছে তা আরও স্পষ্টভাবে বলা হলে ভালো হতো। শুধু বলা হচ্ছে—ডানপন্থি, বামপন্থি, মধ্যপন্থি সবাই থাকবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদর্শভিত্তিক জোট যদি হয়, সেটা অবশ্যই ইতিবাচক হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা বিবেচনায় রাখতে হবে, আদর্শ ছাড়া কেবল নির্বাচনী সুবিধার জন্য গঠিত জোট কখনোই টেকসই হয় না।”

নূরের ওপর হামলার বিচার না হলে ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি এবি পার্টির, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি

আহত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের ওপর হামলার বিচার না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভয়াবহ পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নূরকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

“নুর শুরু, নুরে শেষ হবে না”—হুঁশিয়ারি ফুয়াদের

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন,
“ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে নিজেদের গলার রশিটার যত্ন নিতে হবে। মাথায় রাখবেন—নুর শুরু, নুর দিয়ে শেষ হবে না।”

তিনি অভিযোগ করেন, গত সপ্তাহে যৌথবাহিনী ও পুলিশ নুরুল হকের ওপর নির্মম হামলা চালিয়েছে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে ও তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ের বাইরে। হামলায় নুর গুরুতর আহত হয়েছেন—নাকের হাড় ভেঙে গেছে, দম নিতে কষ্ট হচ্ছে, মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হচ্ছে। ঘুমাতে পারছেন না। ওটি করে রক্ত পরিষ্কার করতে হয়েছে।

ফুয়াদ জানান, একই হামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানও গুরুতর আহত হয়েছেন। তার কোমরের হাড় ডিসপ্লেস হয়ে গেছে, হাঁটতে পারছেন না। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তিনিও।

“বিচার না হলে উপদেষ্টাদের লাশ পড়বে”

বিস্ফোরক অভিযোগ করে ফুয়াদ বলেন,
“যদি দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হয়, তবে অনেক উপদেষ্টার নাম ইতোমধ্যেই এসাসিনেশনস প্ল্যানের তালিকায় আছে। তাদের লাশও কয়েকদিন পর পড়বে। তখন বিচার করার মতো মানুষও থাকবে না।”

তিনি বলেন,
“আমরা খুব হতাশ। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে যা যা করা দরকার, সব করছেন। আজ যা হচ্ছে, তা আসলে আগের আওয়ামী লীগের সময়েরই পুনরাবৃত্তি—গুম, খুন, বিচারহীনতা।”

‘জাতীয় পার্টি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’

ফুয়াদ আরও দাবি করেন, সম্প্রতি তার দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাকিব রহমানকে কোনো নোটিশ ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের স্বীকার করেন, এটি ভারতীয় হাইকমিশনের নির্দেশে করা হয়েছে।

ফুয়াদের ভাষায়,
“যদি ভারতের নির্দেশে একটি দলের নেতা বরখাস্ত হয়, তাহলে সেই দল বাংলাদেশের দল হতে পারে না। তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।”

তিনি বলেন, আশির দশক থেকেই জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে নয়, বরং বিপক্ষে কাজ করে আসছে। এরশাদ থেকে শুরু করে তারা সবসময় আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ভূমিকা রেখেছে।

“জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে”

জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন,
“শুধু আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা মিলে গত ১৬ বছর ধরে দিল্লির আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। জাতীয় পার্টিই ছিল প্রধান হাতিয়ার।”

তিনি দাবি করেন,
“২০১৪ সালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং এসে কীভাবে জাতীয় পার্টিকে দিয়ে নির্বাচন করিয়েছেন, তা দেশবাসী জানে। ২০১৮ হোক বা ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন—প্রতিটিতেই এই দল ছিল মূল অংশীদার।”

জিএম কাদের সম্পর্কে ফুয়াদের মন্তব্য,
“জিএম কাদের আপাদমস্তক ভারতপন্থী। তার দলের কার্যক্রমও তাই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী।”

‘এস আলম-শেখ হাসিনা বৈঠকে এসাসিনেশন পরিকল্পনা’

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি এসেছে একটি ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গে। ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন,
“আমরা খবর পাচ্ছি—এস আলম ও শেখ হাসিনার এক বৈঠকে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে হাইপ্রোফাইল এসাসিনেশনের পরিকল্পনা হয়েছে। এর সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’, দিল্লি ও আওয়ামী লীগ যুক্ত।”

তিনি দাবি করেন, দিল্লির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে, তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকের নাম সেই তালিকায় রয়েছে।

‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ’

এবি পার্টির এই নেতা বলেন,
“২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলার ঘটনায় জড়িতদের স্ট্যান্ড রিলিজ করা উচিত ছিল। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সম্পূর্ণ অযোগ্য, ইউজলেস—তাকে ফেলে দেওয়া উচিত ছিল।”

ফুয়াদের দাবি, সেনাবাহিনীর ভেতরেও ‘আয়না ঘর’ নামক এক ক্রিমিনাল নেটওয়ার্ক সক্রিয় আছে, যারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগসাজশে এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত।


সংক্ষিপ্তভাবে যা বললেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ:

  • নূরের ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন নয়, এটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ

  • জাতীয় পার্টি স্বাধীনতা-বিরোধী, নিষিদ্ধ করা উচিত

  • ভারতের নির্দেশে জাতীয় পার্টি নেতা বরখাস্ত, যা জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি

  • নূর ও নাজমুলের ওপর যৌথবাহিনীর হামলায় কোনো ব্যবস্থা নেই

  • এস আলম-শেখ হাসিনা বৈঠকে এসাসিনেশনের পরিকল্পনার অভিযোগ

  • স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অযোগ্য, সেনাবাহিনীতে অপরাধী নেটওয়ার্ক সক্রিয়ফু

ফুয়াদের বক্তব্য ও অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এখন দেখার বিষয়, অন্তর্বর্তী সরকার এসব দাবির বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া জানায়।

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত, ছাত্রদলের কার্যক্রম স্থগিত

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন ও সদস্যসচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাবলুর নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) পিরোজপুর সদর উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ভোটগ্রহণ চলাকালে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজন যুবক ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়, ফলে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করে। এ ঘটনার পর জেলা বিএনপির নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। এর জের ধরে গতকাল রাতে জেলা আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ছাত্রদলের কার্যক্রমও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এছাড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বিলুপ্তির কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে শিগগিরই পিরোজপুর জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্রচারে সাদিক কায়েম কেন্দ্রীয় ভূমিকায়

 জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে ইসলামী ছাত্রশিবির। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই কার্যক্রম দৃশ্যমান হলেও, জানা যায়, নেপথ্যে থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি তখন ছিলেন শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক।

গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাদিক কায়েম ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন। এই পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে শিবির। তাদের প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। এই প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী সাদিক কায়েম। তাঁকে কেন্দ্র করে শিবির তাদের প্রচারণা পরিচালনা করছে। সংগঠনটির দাবি, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সাদিক কায়েমের ভূমিকা আলোচিত হওয়ায় তাঁর পরিচিতি সংগঠনের বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে। তাঁর যোগাযোগ দক্ষতা এবং গত এক বছরে অনিয়মে জড়ানোর কোনো অভিযোগ না থাকায় তাঁকে প্রচারের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

প্রচারণার কৌশল

শিবিরের প্রার্থীরা অনলাইনের পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসিক হলে সশরীরে প্রচার চালাচ্ছেন। তারা নিয়মিত বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে যাচ্ছেন। ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে নিয়মিত ভিডিও ও ছবি পোস্ট করছে শিবির। এসব প্রচারণায় সাদিক কায়েমের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। এছাড়া, ডাকসুর বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে শিবিরের প্রার্থীদের কার্যক্রমও তুলে ধরা হচ্ছে।

অনাবাসিক শিক্ষার্থী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে শিবিরের প্যানেল। তারা দাবি করছে, গত এক বছরে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে তারা একটি ‘ভোটব্যাংক’ তৈরি করেছে। মাদ্রাসা থেকে আসা শিক্ষার্থী এবং কোচিংয়ের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশের ভোট পাওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। এর ফলে তারা অন্য প্যানেলের তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছে।

ছাত্রীদের জন্য প্রতিশ্রুতি

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রী ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মোট ভোটারের প্রায় ৪৮ শতাংশ ছাত্রী, অর্থাৎ ১৮ হাজার ৯৫৯ জন। তবে, ক্যাম্পাসে আলোচনা রয়েছে যে, শিবির নির্বাচিত হলে নারীদের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে। এই আলোচনার মধ্যেও শিবির তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছাত্রীদের জন্য সাতটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এগুলো হলো:

  1. ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা।

  2. ছাত্রী হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করা।

  3. মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান কার্যকর করা।

  4. একাডেমিক ভবনে বিনামূল্যে মেন্সট্রুয়াল হাইজিন প্রোডাক্ট সরবরাহ।

  5. ছাত্রীদের জন্য সেলফ ডিফেন্স প্রশিক্ষণের আয়োজন।

  6. যৌন হয়রানি ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ বাস্তবায়ন।

  7. কমনরুমে নারী কর্মচারী নিয়োগ, ব্রেস্ট ফিডিং রুম ও চাইল্ড কেয়ার কর্নার স্থাপন।

ভোটের সমীকরণ

ক্যাম্পাসে আলোচনা রয়েছে, ১৮টি হল সংসদের নির্বাচনে শিবির কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। দলীয় প্যানেল না দিয়ে তারা পছন্দের প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে সমর্থন দিচ্ছে। তবে, জগন্নাথ হলের ভোট শিবিরের পক্ষে যাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই হলে মোট ভোটারের ৬ শতাংশ, অর্থাৎ ২ হাজার ২২২ জন ভোটার রয়েছেন, যারা সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। শিবিরের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। শুধু উল্লেখ করা হয়েছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করবে।

শিবিরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, “আমাদের প্যানেলের শক্তি হচ্ছে অন্তর্ভুক্তি। মুসলিম-অমুসলিম, বাঙালি-অবাঙালি, হিজাবি-নন হিজাবি, শিবিরের পক্ষে ও সমালোচক—সবাই আমাদের প্যানেলে আছেন।”

অভিযোগ ও চ্যালেঞ্জ

প্রচারণার বিভিন্ন পর্যায়ে শিবিরের প্যানেল অভিযোগ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ছাত্র সংগঠনের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছে। তাদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও সাইবার বুলিংয়ের ঘটনাও ঘটছে। শিবিরের এজিএস প্রার্থী মুহা. মহিউদ্দীন খান বলেন, “চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের বিরুদ্ধে কৃত্রিমভাবে হিংসা বা ক্রোধ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।”

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রীদের ভোট এবং জগন্নাথ হলের ভোট নির্ধারক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিবির এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও, তাদের প্যানেলে চারজন নারী শিক্ষার্থী এবং চাকমা সম্প্রদায়ের একজন প্রার্থী রয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা ছাত্রী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে।