সাহস থাকলে কাউন্সিল করুন, দেখব কত ভোট পান: জি এম কাদেরকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

যোগদান সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া আনিসুল ইসলাম মাহমুদ যোগদান সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন। *ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দলের সম্মেলন নিয়ে জি এম কাদেরের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে দলের এক যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সাহস থাকলে কাউন্সিল করুন। আমি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমার প্যানেলে মহাসচিব থাকবেন রুহুল আমিন হাওলাদার। আপনি নির্বাচনে আসেন, আমি দেখতে চাই আপনি কত ভোট পান।’ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। জাতীয় পার্টির প্রতি নিজের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির বিরাট সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ করছি। কোনোভাবেই জাতীয় পার্টিকে ভাঙতে দেওয়া হবে না। অনেক কষ্ট করে এই পার্টিটা করেছি, এটি যেন মুসলিম লীগ-জাসদের মতো হয়ে না যায়। আমরা জাতীয় পার্টিকে বড় করার চেষ্টা করছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, জাতীয় পার্টি ভাঙবে না, আরও বৃহৎ হবে।’ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও দলের চেয়ারম্যান এরশাদের উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এরশাদ সাহেব আমাকে বলে গেছেন, এ পার্টি যেন সাধারণ মানুষের মাঝে থাকে। আমরা সে জন্য কাজ করছি। যখন দেখলাম পদ নিয়ে পার্টিতে বাণিজ্য হচ্ছে, তখন আমি চেয়ারম্যানকে বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য বলেছি। কিন্তু তিনি তা বন্ধ করেননি। গণতান্ত্রিক উপায়ে পার্টি পরিচালনার জন্য ২০–এর ১(ক) ধারা বাতিল করার জন্য বলেছি। তিনি তা-ও শোনেননি।’ জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দল পরিচালনায় কর্তৃত্ববাদী আচরণের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘জি এম কাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন। কিন্তু তিনি দলে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরশাদ সাহেবও আমাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন না। কিন্তু জি এম কাদের নিজেকে খোদার চেয়ে বেশি শক্তিশালী মনে করেন।’ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘তিনি বারবার বলেন, আমি চেয়ারম্যান, আমার কথাই সব। এভাবে কোনো রাজনৈতিক দল চলতে পারে না। সবার সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো সরকারও চলে না। অথচ জি এম কাদের নিজের কর্তৃত্ব বজায় রেখে দল চালাতে চান।’ সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত কো–চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘বাংলাদেশে একটিই জাতীয় পার্টি থাকবে, দুটো নয়। কোনো সিন্ডিকেটের মধ্যে জাতীয় পার্টি বন্দী থাকবে না। জাতীয় পার্টি হবে তৃণমূলের সব নেতা-কর্মীদের। দেশ আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশে একটা পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন সময়ের দাবি। জাতীয় পার্টিতেও পরিবর্তনের সময় এসেছে।’ গতকাল জাতীয় পার্টির নবনিযুক্ত মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সমালোচনার প্রসঙ্গে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘জি এম কাদের একজন ব্যারিস্টারকে মহাসচিব করেছেন। তিনি আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছেন, বলেছেন আমরা সিনিয়ররা বেইমানি করেছি। তাঁর কথায় আঘাত পেয়েছি। তাঁর উচিত শালীনতার সঙ্গে কথা বলা। তিনি যে এমপি হয়েছিলেন, তার পেছনে আমার কী অবদান, তা স্মরণে রাখা উচিত।’ জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদসহ সব পদ থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘জি এম কাদের অসাংগঠনিক, অগণতান্ত্রিক ও বেআইনিভাবে আমাদের ১১ জনকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আমরা এই অব্যাহতি মানি না। আমরা আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত নিজ নিজ পদে বহাল আছি। জি এম কাদের তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে দল চালাতে চান না, কিন্তু আমরা যাঁরা এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা, তাঁরা কোনোভাবে জাতীয় পার্টিকে ভাঙতে দেব না, ছোট হতে দেব না, কোনো সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিতে পারি না।’ মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, ‘কাউন্সিল আহ্বানের পর কাউকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ নেই। শুধু কাউন্সিলে জি এম কাদেরকে যাতে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে না পারে, সে জন্য তিনি ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তড়িঘড়ি আমাদের অব্যাহতি দেওয়ার নাটক করেছেন। তবে তিনি যে উদ্দেশ্যে এই নাটক করছেন, তাতে সফল হতে পারবেন না। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা লাখ লাখ এরশাদপ্রেমী জাতীয় পার্টির কর্মী তার অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেবে।’ অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এবং কুমিল্লা-৮ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বে তিন শতাধিক নেতা-কর্মী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির বৃহত্তর ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। লিয়াকত হোসেন জানান, তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমি জি এম কাদেরকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। জি এম কাদেরের আশপাশে থাকা কিছু তথাকথিত নেতা একটা সিন্ডিকেট করে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে দলকে ছোট করছে। তারা চায় না দল বড় হোক, ঐক্যবদ্ধ হোক। কিন্তু জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চায় জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ ও বড় হোক।’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন বাওয়াল, আনিসুর রহমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি কাজী মো. মহসিন প্রমুখ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, হারুন আর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর হোসেনসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।