ঢাকা, ১৩ জুলাই ২০২৫: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এবং জরুরি অবস্থা জারি-সংক্রান্ত সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংযোজনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১২তম দিনের আলোচনা শেষে তিনি এ কথা জানান।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আজকের বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে। তিনি জানান, পূর্ববর্তী বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আপিল বিভাগ থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সংশোধনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছিল। আজকের বৈঠকে আরও তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দান করবেন। তবে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করলে, তারা সংবিধানে এমন বিধান সংযোজন করতে পারবে যে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুজন বিচারপতির মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি যেকোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করবেন। তবে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীন অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে তদন্তপ্রক্রিয়া চলমান থাকলে কোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।”
জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনায় সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধনের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে। ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। এ ছাড়া, জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বা তাঁর অনুপস্থিতিতে উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জরুরি অবস্থা চলাকালে, অনুচ্ছেদ ৪৭(ক)-এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ খর্ব করা যাবে না।
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।